Advertisement
E-Paper

কিষান বাজার চালু কবে, মিলল না জবাব

ঝাঁ চকচকে স্টল। গুদামঘরে নীল-সাদা রং। পাশেই পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে বহুদিন ধরেই পড়ে রয়েছে। মাস কয়েক আগে উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে। অবশ্য চালু হয়নি! ঠিক কবে থেকে চালু হতে পারে, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এসে কিষান বাজার নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক শেষেও ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিলেন না কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৫১
মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে বৈঠক। — নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে বৈঠক। — নিজস্ব চিত্র।

ঝাঁ চকচকে স্টল। গুদামঘরে নীল-সাদা রং। পাশেই পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে বহুদিন ধরেই পড়ে রয়েছে। মাস কয়েক আগে উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে। অবশ্য চালু হয়নি! ঠিক কবে থেকে চালু হতে পারে, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এসে কিষান বাজার নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক শেষেও ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিলেন না কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। শুধু আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই কিষান বাজারগুলো চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “কিসান বাজারগুলো চালু করে দেওয়া নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এটা বিশেষ প্রয়োজন ছিল। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। ৩১ জুলাই টার্গেট রাখা হয়েছে। তবে কয়েকটির ক্ষেত্রে একটু দেরি হতে পারে। যদি কোনও ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হয়, তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করা হবে।’’
এই প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকালে মেদিনীপুরে আসেন অরূপবাবু। বৈঠকটি হয় মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। ছিলেন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ প্রমুখ। বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, “বাজারগুলো চালুর জন্য জেলাশাসককে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। গাইডলাইনও জেলায় এসে গিয়েছে।’’ অরূপবাবুর দাবি, “এ বার কিসান বাজারগুলো পুরোপুরি চালু হবে। যদিও রাজ্যের বেশির ভাগ কিসান বাজারেই ধান কেনা ইতিমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে! ধান কেনার সঙ্গে সঙ্গে সারা বছর ধরে যাতে বাজারটা চলে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” মন্ত্রী জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরে সাতটি কিসান বাজারের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আর তিনটির কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হবে। এরমধ্যে রয়েছে কেশিয়াড়ি, সবং এবং বিনপুর- ২। কেশিয়াড়িতে ৯৫ শতাংশ, সবংয়ে ৯৮ শতাংশ এবং বিনপুর- ২ এ ৭৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, গড়বেতা- ১, নারায়ণগড়, কেশপুর, চন্দ্রকোনা- ২ এবং পিংলায় কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।

রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে একটি করে কিসান বাজার (ঘোষণার সময় নাম দেওয়া হয়েছিল কিসান মাণ্ডি) তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই পরিকল্পনা। সেই মতো জেলায় জেলায় নির্দেশ আসে। বিভিন্ন ব্লকে কিসান বাজার তৈরির তোড়জোর শুরু হয়। প্রায় পনেরো বিঘা জমির উপর গড়ে উঠছে এক- একটি বাজার। খরচ প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা। এখানে ঠিক কী কী থাকছে? থাকছে কৃষিপন্য বিক্রির স্টল, গুদামঘর, ওজনঘর, পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা, কৃষক সহায়ক ভবন প্রভৃতি। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবুর কথায়, “এখানে একদিকে যেমন চাষিরা উত্‌পাদিত পন্য নিয়ে সরকারি স্টলে বসে বিক্রি করতে পারবেন, অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে পন্য কিনে নিয়ে যেতে পারবেন।” কৃষি বিপণন দফতরের আশা, এরফলে ফড়েদের দাপট কমবে। চাষিরা ফসলের ন্যায্যা দাম পাবেন। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যাওয়ায় কয়েকটি বাজারের উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। রিমোর্টের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রীই। তবে এই পর্যন্তই। কেন বাজারগুলো চালু হয়নি? প্রশাসন সূত্রে খবর, সমস্যাটা লুকিয়ে ছিল অন্যত্র। কোন নীতিতে এগুলো পরিচালিত হবে তাই এতদিন ঠিক হয়নি। কৃষি দফতরের এক কর্তার কথায়, “যে কোনও সরকারি বাজার চালু করার জন্য একটা ব্যবস্থা থাকা চাই। কিসান বাজার চালুর ক্ষেত্রেও একটা ব্যবস্থা থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থাটাই তৈরি হচ্ছিল না। এখন অবশ্য তৈরি হয়েছে।”

প্রতিটি বাজার চত্বরের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কেন? প্রশাসন সূত্রে খবর, শুরুতে ঠিক ছিল, প্রতিটি বাজারে একটি করে হিমঘর থাকবে। তবে পরে ঠিক হয়, সরকারি উদ্যোগে আপাতত কোনও হিমঘর তৈরি হবে না। পরবর্তী সময় বেসরকারি উদ্যোগে হিমঘর তৈরি হতে পারে। তাই কিছুটা জায়গা ফাঁকা রয়েছে। এমন পরিকাঠামো তৈরি হয়েও আর কতদিন এ ভাবে পড়ে থাকবে, স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্ন উঠছিল। পরিস্থিতি দেখে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এসে কিসান বাজার নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী। বৈঠকে বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকেও ডাকা হয়। কেশপুরের শ্যামল সাউ, স্বপন মণ্ডল প্রমুখ চাষির কথায়, “বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূলত ফড়েরাই। কখনও তাদের প্রোফিট হয়। কখনও সুপার- প্রোফিট হয়। উপায় না- থাকায় অনেকেই ফড়েদের কাছে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিসান বাজার চালু হলে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে।” বৈঠকে টার্গেট রাখা হয়েছে আগামী ৩১ জুলাই। এ বার কবে বাজারগুলো পুরোপুরি চালু হয়, সেটাই দেখার!

Medinipur farmers market kisan mandi Arup roy trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy