Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট কি এতটাই, উঠছে প্রশ্ন
coronavirus

হাসপাতালে বসেও কাজ

হাসপাতালের  বিছানায় বসেই ল্যাপটপে করোনা প্রতিষেধকের হিসেব-নিকেশের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। যাতে সরকারি ভাবে প্রতিষেধকের সঠিক হিসাব রাখে যায়।

হাসপাতালের শয্যায় বসেই চলছে কাজ।

হাসপাতালের শয্যায় বসেই চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৫:২৯
Share: Save:

একজন ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানেজার। আর এক জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত কো-উইন পোর্টাল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা এই দুজনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তা সত্ত্বেও অসুস্থ শরীরেই কাজ করে চলেছেন। কতজনকে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে তার হিসেব নিকেশ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলার স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানেজার সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর অরবিন্দ পাল। রাজ্যে করোনা সংক্রমণ মাত্রায় ছাড়ানোয় ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব দেখা গিয়েছে। সেই অভাব যে কতটা এই ঘটনা তার প্রমাণ বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় চুক্তিভিত্তিক সামান্য বেতনের বিনিময়ে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় চাকরি করেন দু’জন। সম্প্রতি দুজনেই কোভিড আক্রান্ত হন। কয়েকদিন ধরে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন দুজনে। হাসপাতালের বিছানায় বসেই ল্যাপটপে করোনা প্রতিষেধকের হিসেব-নিকেশের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। যাতে সরকারি ভাবে প্রতিষেধকের সঠিক হিসাব রাখে যায়। নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার আদিত্য মুদি বলেন, ‘‘দুজনে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন। পর সুস্থ হয়ে দুজনেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদীপ্ত এবং অরবিন্দ নন্দীগ্রামের একটি মেসে ভাড়া থাকেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও আপাতত তাঁদের হোম আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সেখান থেকেই তাজ়রা প্রতিষেধক বণ্টন সংক্রান্ত হিসাব নিকাশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দুজনেই বলেন, ‘‘যে ভাবে সবাই করোনা বিরুদ্ধে লড়াইতে সামিল হয়েছেন। সেখানে আমরা বসে থাকি কী করে! তাই অসুস্থতার মধ্যেও যতটা পারছি কাজ করে যাচ্ছি।’’

করোনা আক্রান্ত ওই দু'জন স্বাস্থ্যকর্মী স্বেচ্ছায় হাসপাতালের বিছানায় বসে কাজ করছিলেন বলে দাবি করেছেন নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ সমুদ্র সেনগুপ্ত। এ ব্যাপারে তিনি নিজের ফেসবুকে দেওয়ালে দুজনকে ‘করোনা যোদ্ধা’ বলে সম্বোধন করেছেন। সুদীপ্ত আর অরবিন্দ করোনা প্রতিষেধকের হিসেব-নিকেশ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। এই মুহূর্তে দু’জনের পরিপূরক তাদের কাছে নেই বলেই নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনকী কো-উইন পোর্টালের মাধ্যমে প্রতিষেধকের হিসেব-নিকেশ সংক্রান্ত কাজ হঠাৎ অন্য কাউকে শেখানোও যায় না বলে মানছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। ফলে কর্মী সঙ্কটও অন্যতম কারণ।

কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও দুজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে কাজ করানোয় একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। সুদীপ্ত এবং অরবিন্দর অনুপস্থিতিতে প্রতিষেধক বণ্টনের হিসেব-নিকেশ রাখার মকো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কে করবেন তা নিয়েও উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা। পাশাপাশি তাঁরা সুদীপ্ত ও অরবিন্দর দায়িত্ববোধ ও করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশংসাও করেছেন।

রাজ্যে অন্য জেলার তুলনায় এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্মীসংখ্যা যথেষ্ট কম রয়েছে বলে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত কুমার রায় বলেন, ‘‘আপাতত ওঁরা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। এ ধরনের কাজ সকলকে শেখানো যায় না। তা ছাড়া আমাদের হাতে কর্মীসংখ্যা অন্য জেলাকর তুলনায় অনেক কম। সে ক্ষেত্রে আমাদের মতো আধিকারিকদের দায়িত্ব
সামলাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE