Advertisement
১১ মে ২০২৪

পিস্তল হাতে ঘরে, নালিশ করেও তুললেন কাউন্সিলর

রাতে কাউন্সিলর অভিযোগ করলেন, তাঁর বাড়িতে পিস্তল নিয়ে চড়াও হয়েছে এক যুবক। অভিযুক্তকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলেও দিলেন কাউন্সিলর। করলেন অভিযোগ। অথচ সকাল হতেই ভোলবদল। যুবকের পরিবার দাবি করল, অভিযুক্ত মানসিক ভাবে অসুস্থ। এরপর অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন কাউন্সিলর।

কল্যাণী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

কল্যাণী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৪০
Share: Save:

রাতে কাউন্সিলর অভিযোগ করলেন, তাঁর বাড়িতে পিস্তল নিয়ে চড়াও হয়েছে এক যুবক। অভিযুক্তকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলেও দিলেন কাউন্সিলর। করলেন অভিযোগ। অথচ সকাল হতেই ভোলবদল। যুবকের পরিবার দাবি করল, অভিযুক্ত মানসিক ভাবে অসুস্থ। এরপর অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন কাউন্সিলর। জানালেন, যুবকের পরিবার এবং পুলিশের অনুরোধেই অভিযোগ প্রত্যাহার করছেন তিনি। এরপরই যুবকের পরিবার দাবি করল, পিস্তল ছিল না। কাউন্সিলর ভুল দেখেছিলেন। একই ভাবে পুলিশেরও দাবি, ওই যুবকের হাতে নাকি পিস্তল ছিলই না। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এমনই নাটকীয়তা দেখা গেল খড়্গপুর টাউন থানায়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শহরের শ্রীকৃষ্ণপুর মনসামন্দির এলাকার বাসিন্দা ব্যাঙ্ককর্মী শক্তিপদ দাসের ছেলে সাত্যকি দাস মাধ্যমিক পাশ। সোমবার রাতে তিনি খড়্গপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষের বাড়িতে যান। কাউন্সিলরের অভিযোগ, সাত্যকি দাবি করেন, তাঁকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের একটি শংসাপত্র জোগাড় করে দিতে হবে। কল্যাণী বলেন, ‘‘আমি জানিয়ে দিই উচ্চ মাধ্যমিক পাশের শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়। এরপরই বচসায় জড়িয়ে পড়ে সাত্যকি। একটি পিস্তল বার করে আমাকে হুমকি দেয়। আমি চিৎকার করলে পালিয়ে যায়।” পরে পাড়ার ছেলেদের নিয়ে যুবকের বাড়িতে যান কাউন্সিলর। ওই যুবকের মা জানান, ছেলে বাড়িতে নেই। ফোনে ডেকে পাঠানো হয় সাত্যকিকে। তার পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’’

সোমবার রাতেই থানায় ওই তৃণমূল কাউন্সিলর সাত্যকির নামে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তবে এ দিন সকাল হতেই সবকিছু বদলে যায়। সাত্যকিকে গ্রেফতার করা নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। দুপুরে কাউন্সিলর বলেন, “পুলিশও ওই যুবকের বাড়ির লোক বলছে, সাত্যকি মানসিক ভারসাম্যহীন। ওর চিকিৎসা করাবে বলছে পরিবার। তাই পুলিশ ও যুবকের পরিবারের অনুরোধে বাধ্য হয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’’ তবে কাউন্সিলরের অভিযোগ, এর আগেও পাড়ার এক যুবককে পিস্তল দেখিয়ে সাত্যকি হুমকি দিয়েছিল।

সাত্যকির বাবা শক্তিপদবাবু বলেন, ‘‘আমার ছেলের ৩ বছর ধরে মানসিক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ওঁর কাছে পিস্তল ছিল না। কাউন্সিলর ভুল দেখেছেন।”

কাউন্সিলরের প্রশ্ন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের কাছে কী ভাবে পিস্তল এল? পুলিশ সেই তদন্ত করুক।” কিন্তু সাত্যকির হাতে যে পিস্তল ছিল তা মানতে নারাজ পুলিশও। পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “সকালে দু’পক্ষ থানায় এসে জানিয়েছে ওরা মীমাংসা করে নিয়েছে। আর পিস্তল ছিল না। কাউন্সিলর ভেবেছেন ওই যুবকের হাতে পিস্তল ছিল। যদি কাউন্সিলর অভিযোগ করতে চান আমার কাছে এসে অভিযোগ করতে পারেন।”

পিস্তল নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। তবে এই ঘটনায় শহরবাসীদের একাংশ এই ঘটনায় আতঙ্কিত। শহরের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা পাপিয়া সেন বলেন, “আমরা মহিলারা তো অনেকেই বাড়িতে একা থাকি। এ ভাবে সকলের হাতে-হাতে পিস্তল ঘুরলে তো বিপদ। কাউন্সিলরের সঙ্গে যদি এমন হয় আমরা তো অসহায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Councillor Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE