Advertisement
E-Paper

রাজবাড়ি চত্বরে দাপাল দাঁতাল

মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে তিন দিনও কাটেনি। এ বার সরাসরি ঝাড়গ্রাম শহরের রাজবাড়ি চত্বরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে একটি রেসিডেন্ট হাতি। সপ্তাহ খানেক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলা চালিয়ে ছিল একটি হাতি। ঘটনাচক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসটি বর্ধমান রাজবাড়ি চত্বরেই।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৭:৩৮
রাজবাড়ি চত্বরে এই চালকলেই হানা দিয়েছিল হাতি। —নিজস্ব চিত্র।

রাজবাড়ি চত্বরে এই চালকলেই হানা দিয়েছিল হাতি। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে তিন দিনও কাটেনি। এ বার সরাসরি ঝাড়গ্রাম শহরের রাজবাড়ি চত্বরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে একটি রেসিডেন্ট হাতি। সপ্তাহ খানেক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলা চালিয়ে ছিল একটি হাতি। ঘটনাচক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসটি বর্ধমান রাজবাড়ি চত্বরেই।

আর শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি চত্বরে গোল বাধালো গাঁট্টাগোঁট্টা ‘চায়না’ নাকি বিশাল বপুর দাঁতাল ‘রেন্টু’! দিশাহারা বনকর্তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি চালকল। ওটি রাজ পরিবারেরই। প্রায় ঘণ্টা খানেক দৌড়াদৌড়ি করে হাতিটি। সেই সময়ই চালকলের ঘর ও পাঁচিলে ক্ষতিও করেছে সে। ঐতিহ্যবাহী ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে হাতির এই কাণ্ডকারখানায় রক্তচাপ বেড়েছে বন কর্তাদের।

রাজবাড়ির বাসিন্দা হলেন মল্লদেব রাজ পরিবারের উত্তরসূরি তথা ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতিও তিনি। রাজবাড়ির বিশাল চত্বরের ভিতরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজপ্রাসাদ, প্রাচীন মন্দির ও বেশ কিছু প্রাচীন ভবন। স্থানীয় বাসিন্দারা সময় মতো হইহল্লা করে হাতিটিকে খেদিয়ে দেওয়ায় বড় ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে বলে মানছেন রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষ। তবে খোদ শহরের মধ্যে রাজবাড়ি চত্বরে হাতি ঢোকায় মেজাজ হারিয়েছেন দুর্গেশবাবু। বন দফতরের দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

গত ছ’মাসের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় হাতির হানায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে এই তথ্য জানার পরে ঊষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বন দফতরকে ঢেলে সাজার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন মমতা। বন দফতর সূত্রে খবর, দলমার পরিযায়ী পালের কিছু হাতি বছরের পর বছর এলাকায় থেকে গিয়ে ‘রেসিডেন্ট’ হয়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলে গোটা আটেক ‘রেসিডেন্ট’ হাতির মধ্যে দু’টি হাতিকে হামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এলাকাবাসী। গ্রামবাসীরা নাম দিয়েছেন ‘চায়না’ এবং ‘রেন্টু’।

বন দফতরেরও অনুমান, ভোর বেলা রেন্টুই চুপিসাড়ে ঝাড়গ্রাম শহরে ঢুকে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে বৃন্দাবনপুরের দিক থেকে গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে ওই দাঁতালাটি ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে। স্থানীয় দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা আশিস সিংহ, বিশ্বজিৎ রায়, ঝন্টু নামহাতারা জানান, কাকভোরে জনবহুল এলাকায় হাতি দেখে চেঁচামেচি শুরু করেন বাসিন্দারা। তাড়া খেয়ে পিচরাস্তা ধরে হাতিটি হাজির হয় রাজবাড়ির সিংহদরজার কাছে। রাজবাড়ির পাঁচিল বরাবর রয়েছে চালকলে ঢোকার একটি লোহার দরজা। ধান-চালের গন্ধ পেয়ে হাতিটি লোহার দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।

চালকলের কর্মী বিশু নায়েক, সূর্য নায়েকরা বলেন, “হাতিটি গুদাম ঘরের দু’টি দরজা ভেঙে বস্তা থেকে ধান-চাল খেয়ে নেয়। তবে স্থানীয় কয়েকশো বাসিন্দা ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় হাতিটিকে খেদিয়ে দেয়।” রাজবাড়ির সিংহদরজার ঠিক বাইরে রয়েছে পর্যটন দফতরের ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। কয়েকজন পর্যটকও ছিলেন। হাতি দেখে সকলেই ঘাবড়ে যান।

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার রাতে ঝাড়গ্রামের গোবিন্দপুর গ্রামের লাগোয়া জঙ্গল রাস্তায় একটি হাতির হামলায় গুরুতর জখম হন দুই যুবক। মানিকপাড়ার ভালুকখুলিয়া গ্রামের শ্রীমন্ত মল্লিক ও তাঁর ভাগ্নে শোভন মল্লিক মোটরবাইকে করে গোবিন্দপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় হাতির সামনে পড়ে যান তাঁরা। দু’জনকেই ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, “লোকালয়ে হাতি ঢোকা ঠেকাতে চেষ্টা করছি। শহরে কী ভাবে হাতি ঢুকল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

elephant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy