সদ্যসমাপ্ত পুরভোটে ১১টি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কংগ্রেসকে। হাতছাড়া হয়েছে পুরসভাও। এ বার দলেরই নেতা সত্যদেও শর্মা নিজের হারের জন্য অন্তর্ঘাতের অভিযোগে সরব হওয়ায় অস্বস্তিতে কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব। পরাজয়ের পিছনে দলের শহর নেতৃত্বকে দুষে বুধবার কংগ্রেস ছাড়ার হুঁশিয়ারিও দিলেন সত্যদেও শর্মা।
১৯৯০ সালে প্রথম বার নির্দল প্রার্থী হিসেবে শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন সত্যদেওবাবু। তারপর থেকে ২০০০ সাল বাদে প্রতিবারই তিনি ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। ব্যতিক্রম ২০১৫। ২০১০ সালে নির্দল হিসেবে ভোটে জেতেন তিনি। বামেরাও তাঁকে সমর্থন জানায়। খড়্গপুর পুরসভায় ২০১৩ সালে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে কংগ্রেসকে সমর্থন করেন সত্যদেওবাবু। নিজের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় স্ত্রী মীরাদেবী কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল হিসেবে ওই ওয়ার্ডে ভোটে দাঁড়ান। সত্যদেওবাবু কংগ্রেসের টিকিটে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও সত্যদেওবাবু ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই পুরভোটে পরাজিত হন।
সত্যদেওবাবু এ দিন দাবি করেন, ‘‘শহরের মানুষের সমর্থনেই বিগতদিনে তিনি পরপর চার বার কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তি সত্যদেও শর্মাকে দেখেই মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। তবে কংগ্রেস এখন নেতৃত্বের অভাবে ধুঁকছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বয়সজনিত কারণে চাচা দলকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। দল পরিচালনা করছেন রবিশঙ্কর পাণ্ডে। সেখানে শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসেরও অস্তিত্ব নেই। তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস।’’
তাঁর অভিযোগ, “রবিশঙ্কর পাণ্ডে কংগ্রেসকে পরিচালনা করতে পারছেন না। খড়্গপুরের মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছে। তাই দলে আমার প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে নেতারা আশঙ্কায় ছিলেন। তাই আমাকে জব্দ করে দলে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখতে রবিশঙ্কর পাণ্ডে চক্রান্ত করে আমাকে হারিয়েছেন।’’ যদিও খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের কটাক্ষ, ‘‘আমার এত ক্ষমতা আছে বলে জানতাম না। আমরা স্বেচ্ছায় ওঁকে দু’টি আসন ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর সত্যদেও তো অনেক দিন রাজনীতিতে রয়েছে। আগেও কংগ্রেসে ছিল। হঠাৎ ওর মধ্যে এমন কী শক্তি এল যে ওকে ভয় পেতে হবে?’’
পুরভোটের ফল প্রকাশের এত দিন পরে সত্যদেওবাবুর সরব হওয়ার কারণ কী?
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির টিকিটে জয়ী সুনীতা গুপ্ত তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ফের নিজের ওয়ার্ডে প্রভার বাড়াতে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সত্যদেওবাবু। সে খবর পৌছেছে কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছেও। শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসও বলেন, “উনি আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। তাই ওনাকে আমরা টিকিট দিয়েছিলাম। দলে ওনার নেতা হয়ে ওঠার প্রশ্নই নেই। তারপরেও ওনার এমন আচরণের কারণ জানা নেই।’’
সত্যদেওবাবু এ দিন কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। যদিও এ বিষয়ে রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “সত্যদেও কী করবে সেটা ওঁর ব্যপার। দল থেকে কত লোক বেরিয়ে যাবে আবার কত লোক যোগ দেবে। এ নিয়ে আমি বেশি কিছু বলব না।” এ বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সঙ্গে সত্যদেও কথা বলেছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁকে দলের শহর কমিটির সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy