Advertisement
১৯ মে ২০২৪
খড়্গপুরে আক্রান্ত ১২০
Dengue

ডেঙ্গি-বিপদ বাড়িয়েছে দেরিতে টনক

গত সপ্তাহের গোড়া থেকে শহর জুড়ে লাগাতার সাফাই অভিযান শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়মিত সচেতনতা প্রচারও হচ্ছে, চলছে ম্যাজিকে প্রচার। এত সবের পরেও অবশ্য ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যায় রাশ টানা যাচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানই বলছে, গত এক সপ্তাহে খড়্গপুরে নতুন করে আরও ২০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

জঞ্জালময়: বিনআর ময়দান সংলগ্ন এলাকা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

জঞ্জালময়: বিনআর ময়দান সংলগ্ন এলাকা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৪
Share: Save:

ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে রবিবার সকালেই খড়্গপুরের এক বাসিন্দাকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা হবে। রোগীর এক পরিজন বলছিলেন, “শহর জুড়ে জ্বর। এই সময় ডেঙ্গি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

গত সপ্তাহের গোড়া থেকে শহর জুড়ে লাগাতার সাফাই অভিযান শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়মিত সচেতনতা প্রচারও হচ্ছে, চলছে ম্যাজিকে প্রচার। এত সবের পরেও অবশ্য ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যায় রাশ টানা যাচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানই বলছে, গত এক সপ্তাহে খড়্গপুরে নতুন করে আরও ২০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৬৯জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মধ্যে ১২০জনই খড়্গপুরের বাসিন্দা। এক সপ্তাহ আগেও সংখ্যাটা ছিল ৯২। জেলায় ডেঙ্গিতে যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যেও দু’জন খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার অবশ্য বক্তব্য, “নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে ঠিকই তবে সকলেরই এখন চিকিৎসা চলছে। ফলে, তেমন উদ্বেগের কিছু নেই।’’

শহরবাসীর উদ্বেগ তাতে কমছে না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক মানুষ জ্বরে ভুগছেন। কেউ কেউ হাসপাতাল, নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছেন। কারও আবার বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “শহরের ডেঙ্গি প্রবণ এলাকাগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব ওয়ার্ডেই আরও বেশি করে মশানাশক রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধে পুরসভার চেষ্টার ত্রুটি নেই।’’ তাঁর কথায়, “সাফাই অভিযানে নিশ্চিত ভাবেই মশার দাপট কমবে। তাহলেই আশা করি আক্রান্তও ধীরে ধীরে কমবে।’’

কেন কিছুতেই খড়্গপুরের ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে রাশ টানা যাচ্ছে না? এই উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরেও। রেলশহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে যাওয়া এক স্বাস্থ্যকর্তা বলছিলেন, “খড়্গপুরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণ জমা জল। সেখানেই মশার লার্ভার খোঁজ মিলেছে। শহরের নানা স্থানে, বিশেষ করে রেল এলাকায় বড় বড় নিকাশি নালার জমা জলেও মশা বংশবৃদ্ধি করেছে।’’ একই সঙ্গে অভিযোগ, পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরুর দিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়ার দরকার ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি। ফলে, ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে। গোড়ার দিকে মশাবাহিত রোগ নিয়ে তথ্য পুরসভা চেপে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। এখন যে সাফাই অভিযান বা সচেতনতা প্রচার চলছে, সপ্তাহ দুয়েক আগেও তা চোখে পড়েনি। রেলশহরের এক পুরকর্তা মানছেন, “জমা জলে মশার লার্ভা পাওয়ার পরেও শহরে পরিদর্শন হয়েছে গোপনে। এই গোপনীয়তা না রাখলেই হয়তো ভাল হত।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু এবং খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপবাবু দু’জনেই যদিও বলছেন, “খড়্গপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এটা ঠিক। এখানে তো লুকনোর কিছু নেই। তবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে সব এলাকায় রোগের প্রকোপ বেশি, সেখানে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE