মশাবাহিত জ্বরের প্রকোপ ঠেকাতে নানা পরামর্শ ও সতর্কতা সহ প্রচার চালানো হয়েছে জেলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায়। তা সত্ত্বেও জ্বরে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরে। তার উপর পাশে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বন্যার জেরে সেখানেও জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। আর ফলে তমলুক জেলা হাসাপাতালে ঠাঁই ঠাঁই নেই অবস্থা। কারণ দুই জেলা থেকেই জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় করছেন এখানে। ইতিমধ্যেই জ্বর নিয়ে ভর্তির সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে মেল, ফিমেল, আইসোলেশন ওয়ার্ড ছাড়াও আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে মূল ভবনে যাতায়াতের পথে ছাউনির নীচে মেঝেতেও অস্থায়ী শয্যায় জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। আর তা নিয়েই অভিযোগ তুলেছেন রোগীর বাড়ির লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, মেঝেতে যেখানে রোগীদের রাখা হয়েছে সেই চত্বরের আশপাশে আগাছা ও জঙ্গল। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। মশার দাপটে টেকা দায়। অনেক রোগীর পরিবার মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও করছেন।
রোগীদের এ ভাবে পড়ে থাকা নিয়ে জেলা হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন এলাকার রোগী ছাড়াও পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার রোগীরাও এখানে ভর্তি আসছেন। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগী ভর্তি বেশী হওয়ায় কিছু রোগীকে মেঝেতে রাখতে হয়েছে। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’’ সুপারের আরও দাবি, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে এখনও কারও ডেঙ্গি ধরা পড়েনি বলে রক্ত পরীক্ষায় জানা গিয়েছে। অনেকেই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত। তবে সকলেরই ভালভাবে চিকিৎসা চলছে।
তমলুক জেলা হাসপাতালে বর্তমানে শয্যাসংখ্যা ৪১৫ টি। বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৫৪ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে আসা রোগীকে ফেরাতে নিষেধ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সকলকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে বাধ্য হয়েই এ ভাবে রাখতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল আইসোলেশন ওয়ার্ড ও সেখান থেকে মূল ভবনে যাতায়াতের পথে ছাউনির তলায় মেঝেতে রোগীদের ভিড়। অনেকে মশার ভয়ে মশারি টাঙিয়েছেন। এঁদের প্রায় সকলেই জ্বরে আক্রান্ত। মহিষাদলের চাপি গ্রামের যুবক আবদুল মজিদ বেগ বলেন, ‘‘প্রথমে মহিষাদল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখান থেকে সোমবার এখানে ভর্তি হই। চারদিন ধরে এভাবেই পড়ে রয়েছি। পাশেই ঝোপ–জঙ্গল থাকায় সব সময় মশার উপদ্রব। তাই মশারিতেই থাকতে হচ্ছে।’’