Advertisement
E-Paper

জমা জল, আগাছায় হাসপাতালেই বিপদ

হাসপাতাল ভবনের ভিতরটা সাফসুতরো। কিন্তু তার বাইরে গোটা চত্বর অপরিচ্ছন্ন। ভবনের পিছনে আগাছা, নিকাশি সমস্যায় জল জমেছে যেখানে সেখানে। যে খড়্গপুর হাসপাতালে চারজন ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে, সেখানেই এই ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৩
আগাছার জঙ্গল। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে (বাঁ দিকে)। হাসপাতালের সামনে জমে জল (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

আগাছার জঙ্গল। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে (বাঁ দিকে)। হাসপাতালের সামনে জমে জল (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল ভবনের ভিতরটা সাফসুতরো। কিন্তু তার বাইরে গোটা চত্বর অপরিচ্ছন্ন। ভবনের পিছনে আগাছা, নিকাশি সমস্যায় জল জমেছে যেখানে সেখানে।

যে খড়্গপুর হাসপাতালে চারজন ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে, সেখানেই এই ছবি। রোগীর পরিজনেদের আশঙ্কা, জমা জল ও আগাছায় হাসপাতাল চত্বরই ডেঙ্গির মশার আঁতুরঘর হয়ে দাঁড়াচ্ছে না তো! ডেঙ্গি মোকাবিলায় খড়্গপুর হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

পরিস্থিতি বুঝে হাসপাতালের সামনের অংশে আগাছা সাফাই অভিযান শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে পিছনের দিকের আগাছা এখনও পরিষ্কার হয়নি। হাসপাতাল ভবনের পিছন দিকে রেলের নর্দমা মজে যাওয়ায় জলও জমছে। আর তাতেই জন্মাচ্ছে মশা। মশার উপদ্রবে নাজেহাল রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। মকরামপুর থেকে আসা দিগন্ত দাসের কথায়, “আমার এক আত্মীয় চারদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাঁকে দেখতে প্রায়ই আসছি। এখানে যা মশার উপদ্রব তাতে হাসপাতালও নিরাপদ নয়।’’ হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আগাছা কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। নিয়মিত শ্রমিকেরা কাজ করছে। তবে রেলের নর্দমার জন্য নিকাশির একটা সমস্যা রয়েছে। আমরা পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছি। ব্লিচিং ছড়ানো ও সাফাইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন পুরপ্রধান।’’

রয়েছে অন্য সমস্যাও। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে অধিকাংশ রোগী মশারি ব্যবহার করছেন না বলে অভিযোগ। এমনকী অনেক সময়ে ডেঙ্গি আক্রান্তও মশারির বাইরে চলে আসছে। হাসপাতালে গিয়ে যেমন দেখা গেল, ডেঙ্গি আক্রান্ত বছর বারোর বুদ্ধদেব দাস মশারির বাইরে রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগী মশারি ব্যবহার করছেন না। বুদ্ধদেবের মা রিনা দাসের ব্যাখ্যা, “ছেলেটা খাবে বলে মশারির বাইরে এসেছে। তবে সর্বত্র মশার উপদ্রব। ছেলের ডেঙ্গি হওয়ায় আমরাও ভয়ে রয়েছি।’’

নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ রোগীকে বাড়ি থেকেই মশারি আনতে হয়েছে। ডেঙ্গি আক্রান্ত বছর চল্লিশের সরস্বতী বেহেরার ননদ জয়শ্রী বেহেরা বললেন, “হাসপাতাল থেকে মশারি না দেওয়ায় বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছি।’’ ডেঙ্গি আক্রান্ত নিমপুরার বছর এগারোর বি জে লক্ষ্মীকেও মশারি আনতে হয়েছে বাড়ি থেকে। ডেঙ্গির মশা অন্য কোনও রোগীকে কামড়ালে তার ডেঙ্গির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাও অধিকাংশ রোগী মশারি ছাড়াই হাসপাতালে থাকায় সেই আশঙ্কা বাড়ছে। অবশ্য হাসপাতালে মশারি পর্যাপ্ত বলে দাবি করেছেন সুপার কৃষ্ণেন্দুবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, “আমাদের কাছে মশারি রয়েছে। তবে অনেকেই স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে মশারি আনছেন। আর মশারি ছাড়া দিনেও থাকা ঠিক নয়। নজরদারির জন্য নার্সদের বলব।”

হাসপাতালের পরিকাঠামোতেও রয়েছে খামতি। খড়্গপুর হাসপাতালে একজন সাধারণ ডেঙ্গি রোগীকে ধুস্যালাইন ও জ্বরের ওষুধ দেওয়া ছাড়া আর কোনও চিকিৎসা নেই বলেই দাবি চিকিৎসকদের। আর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে সেই ‘রেফার’। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর প্রধান কারণ দেহের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ। রক্তের প্লেটলেট কমে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত প্লেটলেট পরীক্ষা করে রোগীকে প্লেটলেট দেওয়ার দরকার পরে। এই হাসপাতালে প্লেটলেট পরীক্ষা করা হলেও প্লেটলেট দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সে ক্ষেত্রে জেলায় ভরসা মেদিনীপুর মেডিক্যাল। রোগীকে মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। যদিও খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত একজন ডেঙ্গি রোগী ছাড়া আর কাউকে আমাদের মেদিনীপুরে রেফার করতে হয়নি। তবে এটা ঠিক কারও প্লেটলেট দিতে গেলে মেদিনীপুর ছাড়া উপায় নেই।’’

Dengue Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy