খুশির ইদ। মেদিনীপুরে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
কারও কাছে ইদ মানে ঘরে ফেরা।
কারও কাছে ইদ মানে দুঃস্থদের সাহায্য।
আর কারও কাছে এক মাসের দীর্ঘ নিয়মানুবর্তিতার পর নিখাদ আনন্দ আর উৎসব।
সারা রাজ্যের মত বৃহস্পতিবার দিনভর ইদের আনন্দে মাতলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষ। হলদিয়ার হেলিপ্যাড মাঠে, রানিচকে বন্দর সংলগ্ন মসজিদে জাহাজে আসা ভিনদেশি নাবিকরা নমাজ পাঠ করেন। কাঁথি শহর-সহ মহকুমার বিভিন্ন মসজিদ ইদগা আর মাজারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে নমাজ পাঠ করতে দেখা যায়। নমাজ পাঠের পর একে অপরকে আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। হলদিয়া সংশোধনাগারে এ দিনের ছবিটা ছিল কিছুটা ভিন্ন। ২০৬ জন কয়েদিদের এ দিন সিমাই, লাচ্ছা, পরোটা, ফিরনি পরিবেশন করা হয়। হাজির ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, হলদিয়ার অতিরিক পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এ বার ইদে বেশির ভাগ বাড়িতেই সিমাই –লাচ্ছা, চিকেন কোর্মা–বিরিয়ানির সাথে হালিমের স্বাদ মিলেছে। হলদিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক সমীর আজিজের কথায়, ‘‘চিলি চিকেন, বিরিয়ানি তো আত্মীয়দের বাড়িতে হয়েই যাবে। বন্ধুদের হালিম খাওয়াব বলে রাত জেগে এর প্রস্তুতি নিয়েছি।’’ আবার সুজাতা বেরা বলেন, ‘‘ইদের দিন আমার রান্না বন্ধ। আত্মীয়দের বিরিয়ানি সিমাইয়ে ফ্রিজ ভরে যায়। এ দিন শুধু গল্পের দিন।’’ মহিষাদলের বাসিন্দা রহমত আলির কাছে ইদ মানে বাড়ি ফেরা। একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেন রহমত। বাবার কথা রাখতেই এবং মায়ের টানে প্রতি বছর গ্রামে আসা। তাঁর কথায়, ‘‘ইদে বাড়ি ফিরলে মনে হয় জীবনীশক্তি ফিরে পেলাম।’’
কিন্তু তালটা যেন কিছুতেই মিলছে না এ বার। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে পড়শি দেশ বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার ঘটনাটা। আনন্দের মাঝেও গুলশনের ঘটনা আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছে। বৃহস্পতিবার বিনপুর থানার নয়াগ্রাম ইদগাহ-তে নমাজ পাঠের অনুষ্ঠানের হোতা ছিলেন স্থানীয় নয়াগ্রাম-বিনপুর জামে মসজিদের ইমাম মহম্মদ শাকিল আখতার। নমাজের পরে বিশ্বশান্তির উদ্দেশে এক প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়। এ দিনই বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ইদের নমাজ চলাকালীন গ্রেনেড হামলার ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন নয়াগ্রাম-বিনপুর মুসলিম পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক শেখ নবাব আলি।
কুঁকড়াহাটির বাসিন্দা একাধিক গ্রন্থের লেখক আমিনুল ইসলাম জানান, ‘‘ধর্মের নামে এরা মানবতাকে হত্যা করছে। ইসলাম কখনও হিংসাকে প্রশ্রয় দেয় না।’’ একই অভিমত নন্দীগ্রামের বাসিন্দা কবি আবু রাইহানের। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষিত মুসলিম সমাজকে এগিয়ে এসে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে।’’ হলদিয়ার একটি কলেজের শিক্ষক তো বলেই ফেললেন, ‘‘আমাদের শিক্ষিত সমাজকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ ভাবে জাতের নামে বজ্জাতি কখনওই মেনে নেওয়া যায় না।’’
তখন সবে সন্ধে নেমেছে। আকাশ জুড়ে আজানের সুর। আর আজানের সুর তো শান্তিরই!
(তথ্য সহায়তা: সুব্রত গুহ ও কিংশুক গুপ্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy