এ ভাবেই হুকিং (চিহ্নিত) চলে বলে অভিযোগ। খড়্গপুর বীজপাড়ায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে হুকিং। আবার কোথাও সংযোগ থাকা সত্ত্বেও হুকিং চলছে অবাধে। এই ছবি রেলশহর খড়্গপুরের।
বেশ কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে হুকিং বিরোধী অভিযানে গিয়ে বড়সড় বাধা পেয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছিল। তারপর থেকেই রাজ্য জুড়ে এই ধরনের অভিযানে ভাটা পড়েছে। সেই সুযোগে বাড়ছে হুকিং।
খড়্গপুরে হুকিংয়ের রমরমা সব থেকে বেশি রেলবস্তি এলাকায়। বছর দু’য়েক আগে পুরসভার অনুমতিতে ওই রেলবস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে বাধা পেয়েছিল বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর। আর কাজ এগোয়নি। আঁধার ঘোচাতে তাই চলছে যথেচ্ছ হুকিং। বাড়ছে বিপদ। খড়্গপুর মালঞ্চর সুপার মার্কেট সংলগ্ন ট্রান্সফরমার তো সম্প্রতি হুকিংয়ের চাপ সামলাতে না পেরে ফেটে গিয়েছিল। তাতে শোরগোল পড়ে। অতিরিক্ত হুকিংয়ের ফলে ট্রান্সফরমার জ্বলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দাবি উঠছে হুকিং বন্ধের। যদিও বস্তি এলাকার এক বাসিন্দাই বলছেন, “আমরা আবেদন করেও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। তাই বাধ্য হয়ে হুকিং করে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে।’’
শুধু রেলবস্তি নয়, পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও হুকিং চলছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও হুকিংয়ের নজির রয়েছে। ফলে, লো-ভোল্টেজে ক্ষুব্ধ শহরবাসী। অভিযোগ, বিদ্যুৎ দফতর সব জেনেও হাতগুটিয়ে থাকে। ছোট ট্যাংরার বাসিন্দা ঋষি পাল বলেন, “আমাদের এলাকায় যথেচ্ছ হুকিং চলছে। তার জেরে লো-ভোল্টেজ আর ভোল্টেজ ওঠা-নামার সমস্যায় আমরা জেরবার। বিদ্যুৎ দফতর সব
জেনেও উদাসীন।’’
কী ভাবে চলছে হুকিং?
বিদ্যুৎবাহী তার ঢাকা (‘কভারড্ কেবল্’) হলে হুকিং ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু এখনও খড়্গপুরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় খোলা তার। সেখান থেকে অনেকে ‘আর্থিং’ করে বিদ্যুৎ নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত লাইন টেনে নেয়। তবে এমন বিদ্যুৎ সংযোগ বিপজ্জনক। তাই অনেকে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে সরাসরি হুকিং করে। আবার কেউ কেউ বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও মিটারের ফিউজ খুলে রেখে মেইন সুইচে হুকিং করা বিদ্যুতের তার গুঁজে দেয়। খরিদা, ছত্তীসপাড়া, নালিপাড়া, কৌশল্যা, তলঝুলি, ঝুলি, সোনামুখি, ছোট ট্যাংরা, নিমপুরা, বড় আয়মা, ছোট আয়মায় এই
প্রবণতা বেশি।
বিদ্যুৎ দফতরের অবশ্য দাবি, হুকিং বন্ধে নিয়মিত অভিযান হয়। ধরপাকড় চলে। তবে অনেক সময় অভিযানে গিয়ে বিদ্যুৎ কর্মীরা আক্রান্ত হন। ফলে, পিছিয়ে আসতে হয়। অনেক সময় আবার আগে থেকে অভিযানের খবর পেয়ে হুকিং খুলে নেওয়া হয়। ফলে, প্রমাণাভাবে ফিরে আসতে হয় বিদ্যুৎ কর্মীদের। হুকিং বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত বলেও মনে করেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা।
হুকিং-সমস্যার কথা মানছেন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তাঁর বক্তব্য, “খড়্গপুর শহরে হুকিং রয়েছে এটা ঠিক। আমরা বিদ্যুৎ দফতরকে বলেছি, রেল বস্তির জন্য সংলগ্ন পুর এলাকায় আলাদা মিটার বসিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হোক। সেটা পরিকল্পনাস্তরে রয়েছে। তাছাড়া লো-ভোল্টেজ সমস্যা কাটাতে ট্রান্সফরমার বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছি।’’ বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সম্প্রতি খড়্গপুরে দফতরের উন্নতিতে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই টাকায় আপাতত হুকিং ঠেকাতে সিঙ্গল কভার কেবল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। খড়্গপুরের বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কমলকুমার মাইতি বলেন, “পাকাপাকিভাবে হুকিং বন্ধ করতে ‘কভারড্ কেবল্’ বসানো হচ্ছে। ২০১৭-র মার্চের মধ্যে গোটা শহরে এই কেবল্ বসিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করব। আশা করি সমস্যা মিটবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy