দাঁতালরা। —নিজস্ব চিত্র
দেড় মাসে রেসিডেন্ট হাতির হানায় পাঁচ জনের মৃত্যু!
কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম ব্লকে মৃত্যুর এই খতিয়ানে রীতিমতো চিন্তায় বন দফতর। গ্রামবাসীর ক্ষোভের পারদ যে ভাবে চড়ছে, তাতে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা সম্ভব নয়। তাই খুনে হাতিকে চিহ্নিত করে এ বার হেস্তনেস্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সেখানেও সমস্যা। গোটা আটেক হাতির মধ্যে খুনে হাতিকে চিহ্নিত করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন বনকর্মীরা। এ দিকে প্রতিদিনই রেসিডেন্ট হাতিগুলির তাণ্ডবে ফসল ও সম্পত্তি-ক্ষতির বহর বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাসিন্দাদের ক্ষোভ। মৃত্যুমিছিলের প্রেক্ষিতে কয়েকদিন আগে হাতি তাড়ানোর দাবিতে ঝাড়গ্রামের কলাবনিতে রাজ্যসড়ক অবরোধ করেছিলেন বাসিন্দারা। অভিজ্ঞ বনকর্মীরাও মানছেন, মাত্র দেড় মাসের মধ্যে পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা না গেলে সমস্যা আরও বাড়বে। ফলে, বিভিন্ন বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বনকর্মীরা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।
শুক্রবার ঝাড়গ্রামে বন দফতরের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসেছিলেন বন দফতরের সচিব চন্দন সিংহ। রেসিডেন্ট হাতির সমস্যা নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য স্থানীয় আধিকারিকদের নির্দেশ দেন তিনি। বন দফতর সূত্রের খবর, খুনে হাতিটি নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করা গেলে হাতিটিকে ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হতে পারে। অথবা বন দফতরের পরিভাষায় হাতিটিকে ‘রোগ’ ঘোষণা করা হলে বন্যপ্রাণ শাখার অনুমতিক্রমে গুলি করে মেরে ফেলাও হতে পারে।
প্রাথমিক ভাবে সন্দেহের তির দু’টি হাতির দিকে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মূলত ওই দু’টি হাতি লোকজন দেখলেই আক্রমণাত্মক ভাবে তেড়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে বন দফতরও মনে করছে দু’টি হাতির মধ্যে একটি হাতি খুনে হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীরা একটি হাতির নাম দিয়েছেন ‘রেন্টু’। আর একটি হাতি ‘চায়না’ নামে পরিচিত। রেন্টু বিশাল বপুর হাতি। প্রায় আড়াই ফুট লম্বা দাঁত রয়েছে তার। চায়না অবশ্য ছোটখাটো। দাঁতগুলিও বেশ ছোট।
হাতির হামলার ঘটনা ঘটলে সাধারণত সেই এলাকায় গিয়ে হাতির পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেন বনকর্মীরা। কিন্তু সব সময় স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায় না। তবে পর পর তিনটি মৃত্যুর ঘটনার পরে এলাকায় গিয়ে বিশেষ একটি হাতির একই রকম পায়ের ছাপ পেয়েছেন বনকর্মীরা। বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, গত ২১ এপ্রিল রাতে ঝাড়গ্রামের ভাউদা গ্রামে হাতির হানায় বঙ্কিমচন্দ্র মাহাতো নামে এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। ওই গ্রামে দু’টি হাতির দু’রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর ২৯ এপ্রিল দুপুরে হাতির হানায় ঝাড়গ্রামের গড়শালবনির কাজুবাগানে শশধর মাহাতোর নামে বোরিয়া গ্রামের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। গড়শালবনিতে একটি হাতির পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। ভাউদার একটি হাতির পায়ের ছাপের সঙ্গে গড়শালবনিতে পাওয়া হাতির পায়ের ছাপের হুবহু মিল পাওয়া গিয়েছিল। এরপর গত ১১ মে জারুলিয়া গ্রামে হাতির হানায় প্রাণ হারান স্থানীয় যুবক বিশ্বনাথ সিংহ। জারুলিয়ায় যে হাতিটির পায়ের ছাপ বনকর্মীরা সংগ্রহ করেছেন, সেটির সঙ্গে ভাউদা ও গড়শালবনিতে পাওয়া পায়ের ছাপের মিল পাওয়া গিয়েছে।
সংগৃহীত পায়ের ছাপ দেখে অভিজ্ঞ বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, হাতিটি বড়সড়। ফলে সন্দেহটা রেন্টুর দিকেই। তবে চায়নাও ‘সুবোধ হাতি’ নয় বলেই দাবি বাসিন্দাদের। একাংশের দাবি, বছর খানেক আগে চায়নাও মানুষ মেরেছিল। বন দফতরের আধিকারিকের বক্তব্য, অনেক সময় ভয় পেয়ে হাতি আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণ করে। তবে বন দফতরের আধিকারিকরা মনে করেন, দু’একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে খুনে হাতি ঠাওরানো যায় না। তবে প্রাথমিক ভাবে যে হাতিটি মানুষ মারছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেটির পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। হাতিটি সত্যিই খুনে হয়ে উঠেছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য হস্তিবিশেষজ্ঞদেরও সাহায্য নেওয়া হবে।
প্রতি বছর দলমার পালের দু’একটি হাতি এলাকার জঙ্গলে থেকে গিয়ে রেসিডেন্ট হয়ে যায়। এ রকম ৮টি হাতি ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। দেদার ক্ষতি করে ফসলের। তবে আগে প্রাণহানির সংখ্যাটা অনেক কম ছিল। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, “আমরা হাতিটিকে চিহ্নিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ ও তথ্যানুসন্ধানের কাজ শুরু করেছি। একেবারে নিশ্চিত হওয়ার পরই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy