বিপাকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
ক্ষতিপূরণের জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের থেকে আবেদন সংগ্রহের দিন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। আগামী ২৮ অগস্ট-২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানানোর সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনের সঙ্গে জমির খাজনা জমা দেওয়ার রসিদ, কম্পিউটারে সংরক্ষিত জমির রেকর্ড, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রমাণ জমা দিতে হবে। সমস্যাটা ঠিক এখানেই, গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে জেলার অধিকাংশ ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতর থেকে জমির রেকর্ড চেয়ে আবেদন করেও তা মিলছে না বলে অভিযোগ।
গত ১৭ অগস্ট তমলুক মহকুমার পাঁশকুড়া ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, জমির রেকর্ড দেওয়ার কাগজের সরবরাহ না থাকার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য রেকর্ড দেওয়া বন্ধ থাকবে। কাগজ সরবরাহ হলে যথারীতি ফের রেকর্ড দেওয়া হবে। এরফলে ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অনেকেই ব্লক ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতর থেকে জমির রেকর্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করেও পাচ্ছে না। জমির রেকর্ড না পেলে সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ক্ষতিপূরণের আবেদন করা নিয়ে চিন্তায় চাষিরা।
সমস্যার কথা স্বীকার করে তমলুকের মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক স্বপনকুমার হাজরা সোমবার বলেন, ‘‘কম্পিউটারে সংরক্ষতি জমির রেকর্ড দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজের সরবরাহ গত কয়েকদিন ধরে কম রয়েছে। ফলে বেশ কিছু ব্লকে জমির রেকর্ড দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। রেকর্ডের কাগজ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছিল।’’ তিনি বলেন, ‘‘আগামী দু’একদিনের মধ্যে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসগুলিতে রেকর্ডের কাগজ পৌঁছে দেওয়া হবে। ফলে সমস্যা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’
জেলা কৃষি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। পাঁশকুড়ার চৈতন্যপুর এলাকায় ক্ষীরাই নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়। ফলে জেলার প্রতিটি ব্লকেই আমন ধান, সব্জি, পান, ফুল, মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সরকারিভাবে জেলা প্রশাসন জেলার ৯৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও চারটি পুরসভার ২১টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ৫৯৮টি মৌজাকে বন্যাকবলিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চলতি মরসুমেই আমন ধান চাষের জন্য ইতিমধ্যে কৃষি দফতর থেকে জলদি জাতের ধানবীজ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ থেকে চাষের জমির পরিমাণ, ক্ষতিগ্রস্ত চাষের বিস্তারিত বিবরণ-সহ আবেদন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কৃষি দফতর।
সরকারি নির্দেশিকা অনুয়ায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করার জন্য জমির সরকারি খাজনা জমা দেওয়ার প্রমাণ, জমির মালিকানার প্রমাণ হিসেবে কম্পিউটারে সংরক্ষিত জমির রেকর্ড, কৃষকের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকার প্রমাণ পত্র সহ আবেদন করতে হবে ব্লক কৃষি আধিকারিকের কাছে। তবে জমির রেকর্ড না মেলায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁশকুড়া ব্লকের কিসমত জগ্ননাথচক গ্রামের কৃষক নিশীথকুমার কর, ঘোষপুর গ্রামের শুভেন্দু দাস, মাগুরী জগন্নাথচক গ্রামের চিত্ত নায়েক সোমবার পাঁশকুড়া ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসে জমির রেকর্ড নিতে আসেন। তবে খালি হাতেই ফিরে যান তাঁরা। নিশীথবাবু বলেন, ‘‘বন্যায় ধান ও সব্জি চাষের ক্ষতি হয়েছে। সরকারি ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে জমির রেকর্ড পেতে এসেছিলাম। তবে আজ তা পাওয়া যাব না বলে জানানো হয়েছে। ফলে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানাতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’
পাঁশকুড়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তুলিকা দত্ত বলেন, ‘‘জমির রেকর্ড দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজের সরবরাহ না থাকায় কয়েকদিন ধরে সমস্যা হচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ জানিয়েছেন, রেকর্ড দেওয়ার জন্য কাগজ এসেছে। আগামী এক দু’দিনের মধ্যে ফের জমির রেকর্ড দেওয়া হবে।’’ এ বিষয়ে জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে দ্রুত জমির রেকর্ড পান সে জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের জানাব।’’
এই সমস্যা প্রসঙ্গে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক তাপসকুমার বাগচী বলেন, ‘‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে এই রেকর্ডের প্রয়োজন। এ জন্য জমির রেকর্ডের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জেলার বেশ কিছু ব্লকেই এই সমস্যা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কম্পিউটারে সংরক্ষিত জমির মালিকানার রেকর্ড দেওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজ ইতিমধ্যে রাজ্য দফতর থেকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী দু’একদিনে সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy