Advertisement
২১ মে ২০২৪

হঠাৎ ধোঁয়ায় হাসপাতালে আতঙ্ক

অসুস্থ মানুষগুলো তখন সবে ঘুম থেকে উঠেছেন, দেখা করতে এসেছেন পরিবারের কেউ কেউ। এরই মধ্যে পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়া দেখে আতঙ্কে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাঁরা। শুক্রবার বড় সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের রোগিণীরা। ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডটি আধুনিকীকরণের কাজ চলায় বছর তিনেক আগে বহির্বিভাগের একাংশে অস্থায়ীভাবে রাখা হচ্ছিল রোগিণীদের।

বারান্দাতেই শুইয়ে রাখা হয়েছে রোগিণীদের। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বারান্দাতেই শুইয়ে রাখা হয়েছে রোগিণীদের। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:২৮
Share: Save:

অসুস্থ মানুষগুলো তখন সবে ঘুম থেকে উঠেছেন, দেখা করতে এসেছেন পরিবারের কেউ কেউ। এরই মধ্যে পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়া দেখে আতঙ্কে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাঁরা।
শুক্রবার বড় সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের রোগিণীরা। ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডটি আধুনিকীকরণের কাজ চলায় বছর তিনেক আগে বহির্বিভাগের একাংশে অস্থায়ীভাবে রাখা হচ্ছিল রোগিণীদের।
এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ৩৩ শয্যা বিশিষ্ট ওই অস্থায়ী ওয়ার্ডের একটি সুইচ বোর্ড থেকে পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়া বেরোতে থাকে। এর পরেই একটি টিউব লাইটের বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে আগুনের ফুলকি বের হয়। তা দেখে রোগিণী ও তাঁদের পরিজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি। গুরুতর অসুস্থ মহিলারা অনেকেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

গিধনির বাসিন্দা বছর তেষট্টির মন্দাকিনী রানা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ওয়ার্ডে চিকিত্‌সাধীন। মন্দাকিনীদেবীর মেয়ে ঊষা রানা বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকেই ভোল্টেজ কম ছিল। এ দিন সকালে পোড়া গন্ধ ও আগুনের ফুলকি দেখে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।” চিকিৎসাধীন বিমলা মুদি, ছবি মাহাতোরা আতঙ্কে স্যালাইনের বোতল হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

খবর পেয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালের সুপার মলয় আদক ও অন্যান্য কর্মীরা। আসে দমকল। তড়িঘড়ি রোগিণীদের বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সুপারের অফিস সংলগ্ন বারান্দায়। প্রথমে মেঝেতেই শুইয়ে দেওয়া হয় রোগিণীদের। পরে অবশ্য হাসপাতালের নির্মীয়মান প্রসূতি বিভাগের কাজ বন্ধ করে, বিদ্যুত্‌ ও জলের ব্যবস্থা করে শয্যা সমেত ৩৩ জনকে স্থানান্তরিত করা হয়।

হাসপাতালের সুপার মলয় আদক অবশ্য বলেন, “শর্ট সার্কিট থেকে ওই ঘটনা, তবে গুরুতর কিছু হয়নি। রোগিণীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।”

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালে বৈদ্যুতিক সমস্যা হচ্ছিল। মেরামতির কাজও চলছিল। ওই দিন বিকেলে অপারেশন থিয়েটর ও লেবার রুমেও বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বছর তিনেক আগে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ টাকায় হাসপাতালের ৬টি ওয়ার্ডের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়। এ জন্য পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ডগুলি অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালের ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আউটডোরের একাংশে। সেখানে প্লাইউড দিয়ে ঘিরে অস্থায়ী ভাবে রোগিণীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পূর্ত দফতরের ঠিকাদার শম্বুক গতিতে কাজ করছেন। ফলে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অস্থায়ীভাবে ওয়ার্ড চালাতে হচ্ছে।

চিকিৎসাধীন রোগিণী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ, অস্থায়ী ঘিঞ্জি ওয়ার্ডটির বৈদ্যুতিক সংযোগে বিপজ্জনক। গত তিন বছর ধরে বেহাল পরিস্থিতির মধ্যে এই অস্থায়ী ওয়ার্ডে কার্যত প্রাণ হাতে নিয়ে থাকছিলেন অসুস্থ মহিলারা। হাসপাতালে কোনও সমস্যা হলে জরুরি ভিত্তিতে তা দেখার দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন সহকারি সুপার। কিন্তু তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে থাকেন না। তাঁদের এক জন ছুটিতে রয়েছেন। আর এক জন সহকারি সুপার মেদিনীপুর থেকে যাতায়াত করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE