Advertisement
০৩ মে ২০২৪
দ্রুত কাজের নির্দেশ জেলা পরিষদের

তালিকা হয়নি, সুবিধা থেকে বঞ্চিত মৎস্য চাষিরা

পরিকল্পনা তৈরি। রয়েছে টাকাও। উপভোক্তার তালিকা তৈরি না হওয়ায় সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব মৎস্যজীবীরা! অথচ, চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে বাকি মাত্র ৫ দিন! কেন উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা যায়নি? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই উপভোক্তার তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ পঞ্চায়েত সমিতিগুলি। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ দফতরের সাধারণ সভায় তীব্র বিক্ষোভ দেখা গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০২:১৫
Share: Save:

পরিকল্পনা তৈরি। রয়েছে টাকাও। উপভোক্তার তালিকা তৈরি না হওয়ায় সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব মৎস্যজীবীরা! অথচ, চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে বাকি মাত্র ৫ দিন! কেন উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা যায়নি? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই উপভোক্তার তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ পঞ্চায়েত সমিতিগুলি। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ দফতরের সাধারণ সভায় তীব্র বিক্ষোভ দেখা গেল।

এ দিনই জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের স্থায়ী সমিতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন ৭ দিনের মধ্যে উপভোক্তার তালিকা তৈরি করে পাঠায়। কেন আর্থিক বছর শেষ হতে চললেও তালিকা আসেনি? এ বিষয়ে জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ দফতরের স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্টর সাফাই, “পঞ্চায়েত সমিতিগুলি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। কিছু ক্ষেত্রে তালিকা এসেছেও। তাঁরা সরকারি সুযোগও পেয়েছেন। যে কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতি এখনও তালিকা দিতে পারেনি তাঁদের দ্রুত তা দিতে বলা হয়েছে।”

মাছ চাষে আগ্রহ বাড়াতে মৎস্য চাষিদের নানা ধরনের সরকারি সূযোগ-সুবিধে দেওয়া হয়। জলাধার পরিষ্কার করা, মাছের চারা দেওয়া, খাবার দেওয়া, মাছ বিক্রির জন্য মৎস্যযান দেওয়া, সাইকেল দেওয়া-সহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়াও মৎস্য চাষিদের উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এর জন্য রাজ্য সরকার প্রত্যেক জেলাকেই লক্ষ লক্ষ টাকা দেয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও চলতি আর্থিক বছরে ৮০০ উপভোক্তাকে ‘ইনস্যুলেটেড বক্স’, দেড়শো জন উপভোক্তাকে সাইকেল, পঞ্চায়েত ও ব্লক স্তরে প্রশিক্ষণ, ২০টি বড় জলাশয় পরিষ্কার করা-সহ বিভিন্ন প্রকল্প পেয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই এখনও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়নি। ইনস্যুলেটেড বক্স দিতে পারেনি কোনও ব্লকই। সাইকেলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ২০টি বড় জলাশয়ের পরিবর্তে মাত্র ৩টি জলাশয় পরিষ্কার করা গিয়েছে। কেবলমাত্র হাতে গোনা কিছু মৎস্যচাষিকে প্রশিক্ষণ, কিছু চারা ও মিনিকিট দেওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু অর্থ থাকা সত্ত্বেও কেন কাজ করা যায়নি? জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই এর মূল কারণ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও এর একটি কারণ। ফলে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি পঞ্চায়েত সমিতি। চন্দ্রকোনার মৎস্য চাষি রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। বারবার সাহায্যের জন্য পঞ্চায়েত সমিতিতে আবেদনও জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই মেলেনি।” গড়বেতার মৎস্যচাষি কার্তিক রায়েরও বক্তব্য, “মৎস্য যান পেলে তো ভালোই হত। ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতে সুবিধে হত। গ্রীষ্মে সাধারণ ভাবে মাছ বয়ে নিয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সরকারি প্রকল্পে যে ধরনের বক্স দেওয়া হয় তাতে দীর্ঘক্ষণ মাছ সংরক্ষণ করে রাখা যায়।”

কাজে গতি আনতে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেক পঞ্চায়েত সমিতিকে উপভোক্তার তালিকা তৈরি করে জেলা পরিষদে পাঠাতে বলা হয়েছে। যাতে দ্রুত প্রত্যেক ব্লকে ব্লকে উপভোক্তাদের সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়।

এই নির্দেশে কাজ কতটা হল, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jila parishad Pond Fisher men Fishing Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE