Advertisement
E-Paper

দখল হচ্ছে দ্বারিবাঁধ, বর্ষায় ভাসে শহর

নিকাশি নালা রয়েছে, তবে নালা দিয়ে জল বয় না। নালার নোংরা জল ভাসিয়ে দেয় রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতেই মেদিনীপুর শহরের কেন্দ্রস্থল এলআইসিচক, রাজাবাজার, বটতলাচক বা কেরানিতলায় রাস্তার উপর হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৫
নিকাশি নালার উপরেই গড়ে উঠেছে দোকান। মেদিনীপুর পোস্ট অফিস রোডে (বাঁ দিকে)। মজে গিয়েছে দ্বারিবাঁধ খাল (ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিকাশি নালার উপরেই গড়ে উঠেছে দোকান। মেদিনীপুর পোস্ট অফিস রোডে (বাঁ দিকে)। মজে গিয়েছে দ্বারিবাঁধ খাল (ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিকাশি নালা রয়েছে, তবে নালা দিয়ে জল বয় না। নালার নোংরা জল ভাসিয়ে দেয় রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতেই মেদিনীপুর শহরের কেন্দ্রস্থল এলআইসিচক, রাজাবাজার, বটতলাচক বা কেরানিতলায় রাস্তার উপর হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে কোনটা রাস্তা আর কোনটাই বা নালা, তা ঠাওর করা দুষ্কর। বাধ্য হয়ে নোংরা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হন পথচারীরা। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক পরিষেবার উন্নতি হয়নি। ফলে মেটানো যায়নি নিকাশি সমস্যাও।

শহরের নিকাশি সমস্যার কারণ কী?

মেদিনীপুর শহরের প্রধান নিকাশির দ্বারিবাঁধ খাল মজে গিয়েছে। প্লাস্টিক-থার্মোকলে অবরুদ্ধ নালায় জমে থাকে জল। ধর্মার পাশ দিয়ে দ্বিতীয় মহানালা তৈরি নিয়ে চিন্তাভাবনা হলেও এখনও কোনও পরিকল্পনা হয়নি। শহরবাসীদের প্রশ্ন, পুরসভা শহরের নিকাশই সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত পরিকল্পনা না করলে ভবিষ্যতে বর্ষায় শহর বানভাসি হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। শহরের পুরপ্রধান প্রণব বসুর কথায়, “এ বার পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। নিকাশির উপযুক্ত ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও আমাদের শহরে হকার সমস্যা বড় বাধা। তাই হকারদের পুনর্বাসন ও তারই সঙ্গে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছি।’’ হকারদের পুনর্বাসনের পরেই নিকাশি নালা সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।

নিমতলার বাসিন্দা ইকবাল খান বলেন, “প্রতি বর্ষাতেই বাড়িতে জল ঢুকে যায়। তখন খাটের উপরে সব জিনিসপত্র রেখে বসে থাকতে হয়। দ্বারিবাঁধ খাল সংস্কার না করার জন্যই এমনটা ঘটছে।” স্থানীয় বাসিন্দা মানিক কুইলা বলেন, “যত আবর্জনা সবাই খালে ফেলে। তাতে খাল মজে যাচ্ছে। তারই সঙ্গে কিছু কিছু লোক বেআইনিভাবে খালের উপর দোকান, কালভার্ট বানিয়ে নিচ্ছে। ফলে খাল সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। তাতেই বর্ষার সময় জল খাল উপচে বাড়িতে
ঢুকে যায়।”

হকার পুনর্বাসন নিয়ে কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পুরসভা?

পুরপ্রধান জানান, রাস্তার দু’দিকে রয়েছে নিকাশি নালা। সেই নালার উপরেই হকারদের দোকান। ফলে নালাগুলি সংস্কার করা যাচ্ছে না। আর তারই জেরে সামান্য বৃষ্টিতেই জল নালা উপচে ভাসিয়ে দিচ্ছে রাস্তা। যদিও হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক শঙ্কর দাসের কথায়, “পুরসভা নিকাশি নালা সংস্কার করুক না। সেই সময় হকারেরা সরে যাবে। নালা সংস্কারের পর ফের বসবে। তাতে অসুবিধের কী আছে। অথবা হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। রাস্তার ধারে হকারই থাকবে না।”

পুরপ্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সে জন্য খোঁজা হচ্ছে জমিও। আপাতত দু’টি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি হাসপাতাল রোডের ধারে থাকা ডেভিস ট্যাঙ্ক। অন্যটি স্টেশন সংলগ্ন পোলট্রি পুকুরে। ডেভিস ট্যাঙ্কটি এক সময় পুরসভারই ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তা জেলা পরিষদকে লিজ দেওয়া হয়। এখন জেলা পরিষদ ও পুরসভা- দু’টিই তৃণমূলের দখলে। ফলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হবে না।

তবে পোলট্রি পুকুরের ধারে থাকা জমিটি প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের। সদিচ্ছে থাকলে তাও জেলাশাসকের মাধ্যমে পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া যায়। হকারেরাও যে তা মেনে নেবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শঙ্করবাবুর কথায়, “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক না, আমরা রাজি। ডেভিস ট্যাঙ্কের চারিদিকেই তো অনেক দোকান হবে। ব্যবসাও ভাল হবে। আমাদের কোনও সমস্যা নেই।” তা সত্ত্বেও হচ্ছে না কেন? অভিযোগ, কেবলমাত্র পুর-কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। পুরপ্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, এ বার ওই জমি পুরসভার হাতে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, প্রতিদিনই হকারের সংখ্যা বাড়ছে। দখল হয়ে যাচ্ছে শহরের নতুন নতুন এলাকা। হকার পুনর্বাসনে দেরি করা হলে সমস্যা আরও বাড়বে। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, এ ব্যাপারেও প্রাথমিকভাবে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা হল ১৯৯৯ সালে যে ৫৮৮ জন হকারকে পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য তত্‌কালীন পুরপ্রধান গৌরী ঘোষ আড়াই হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন, তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদিও পরবর্তীকালে তাদের অনেকেই ওই টাকা
ফিরিয়ে নিয়েছেন।

পুরপ্রধান বলেন, “এখনও যারা টাকা ফিরিয়ে নেননি তাদেরই পুনর্বাসন দেওয়া হবে।” শঙ্করবাবুর অবশ্য দাবি, “কয়েকজন হকার টাকা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এটা ঠিক। তারা পুনরায় টাকা দেবেন।” এই সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হবে না বলেই মনে করছে উভয়পক্ষই। শহরের বাসিন্দা গোপাল দাসের কথায়, “শুভবুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে জেনে ভাল লাগছে। আশা করব, দ্রুত তা বাস্তবায়িত হোক। তাহলে শহরটা সত্যিই বাঁচবে।’’ সকলেরই দাবি দ্রুত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করুক পুরসভা। তবে বাস্তবে পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটবে কিনা- তা অবশ্য বলবে সময়ই।

Flood Medinipur rain Nimtala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy