নিত্য ভোগান্তি খরিদায়। — নিজস্ব চিত্র
বন্ধ ছিল রেলগেট। অথচ ট্রেন আসতে দেরি করছিল। ক্রমশ ভিড় জমে উঠছিল। অধৈর্য হয়ে অনেকেই সাইকেল, মোটর বাইক নিয়ে পারাপার করছিলেন। তেমন ভাবেই সাইকেল লাইন পার হতে চেয়েছিলেন বেসকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী রবীন চৌধুরী। বেশি সময় লাগেনি। হাওড়াগামী পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের ধাক্কায় নিমেষে ছিটকে গেল সাইকেল। রেলগেটের কাছেই আছড়ে পড়ল রবীনবাবুর নিথর দেহ।
২০১৪ সালের ওই ঘটনায় এখনও শিউরে ওঠেন খড়্গুপরের বাসিন্দারা। অথচ তাঁদের দাবি মেনে আজও রেলশহরের খরিদা রেলগেটের কাছে তৈরি করা যায়নি কোনও উড়ালপুল।
খড়্গপুরের পূর্ব থেকে পশ্চিম অংশে যাওয়ার পথে রয়েছে দু’টি রেলগেট। গিরিময়দান স্টেশনের অরোরা ও খরিদা রেলগেট দু’টি নিয়ে এমনিতেই বিব্রত শহরবাসী। দিনের ব্যস্ততম সময়ে দরজা বন্ধ হয়ে থাকে, ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই। বছর দু’য়েক হল ওই পথে দু’টি রেল লাইন চালু হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যা। আরও বেশি সময় বন্ধ হয়ে থাকছে রেলগেট। চূড়ান্ত নাকাল হচ্ছেন বাসিন্দারা।
অনেক আগেই ওই এলাকায় উড়ালপুল তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল রেল। চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি খড়্গপুরে এসে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার জানিয়ে যান সে কাজ শুরু হতে চলেছে। কিন্তু তারপরেও ন’মাস কেটে গিয়েছে। মাটি পরীক্ষাতেই আটকে আছে উড়ালপুল তৈরির কাজ।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রবেশদ্বার বলেই পরিচিত খড়্গপুর জংশন। এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার, মেমু মিলিয়ে দিনে প্রায় ১৫৭ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে এই লাইনে। গোটা শহরটির তিনদিকই রেলপথে ঘেরা। স্বাভাবিকভাবেই রেলগেটের সংখ্যাও একটু বেশি।
একসময়ে শহরের আইআইটি সংলগ্ন পুরীগেটের রেল ক্রসিংয়ে ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। দীর্ঘ টালবাহানার পরে গত ২০১৩সালে পুরীগেটের উড়ালপুল চালু হয়। তবে প্রাণকেন্দ্র খরিদা ও অরোরার ভোগান্তি আজও অব্যহত। গিরিময়দান থেকে গোকুলপুর পর্যন্ত দ্বিতীয় রেলপথ চালু হওয়ায় চাপ বেড়েছে খরিদা ও অরোরায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন খরিদার উড়ালপুলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় ৫০ কোটি টাকার খরচ ধরা হয়েছিল। সেই মতো রেলের পক্ষ থেকে নকশাও তৈরি করা হয়। কিন্তু তার পরে আর কাজ এগোয়নি।
পরে নতুন করে খরিদা ও অরোরা দু’টি রেলগেটের ওপর উড়ালপুল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে সেই কথা জানিয়ে দেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ৫৮কোটি টাকা। সেই মতো কয়েকটি এলাকায় মাটি পরীক্ষা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
তা ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। কয়েকমাস আগে রেল থেকে জানানো হয়, ওই উড়ালপুলের নকশায় বদল হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উড়ালপুলের দৈর্ঘ্য ১২৭৮মিটার থেকে কমিয়ে ৬৯০মিটার করা হয়েছে। তাতে রেল আবাসন ভাঙার প্রয়োজন হবে না। তবে অরোরা গেট সংলগ্ন কিছু জবরদখল উচ্ছেদ হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন ডিআরএম।
অরোরা গেট এলাকার ব্যবসায়ী সতীশ কুমার, ডি শ্যাম রাও বলেন, “রেল দোকান সরানোর জন্য কিছু বলেনি। তবে উড়ালপুল হলে আমাদের ব্যবসা ধাক্কা খাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু উড়ালপুল হলে মানুষের খুব উপকার হবে।’’
খরিদার বাসিন্দা শিবকুমার পুন্নির কথায়, “সকাল থেকে সন্ধ্যা কতবার যে রেলগেট পড়ছে হিসাব নেই। কবে থেকে শুনছি উড়ালপুল হবে। কোনও চিহ্ন নেই।”
মূলত ৬০নম্বর জাতীয় সড়কের পশ্চিমদিকের সাহাচক থেকে সেনচক, মালঞ্চ, খরিদা হয়ে সহজেই রেলশহরে আসা যায়। খরিদায় রয়েছে বাজার। রয়েছে একাধিক ব্যাঙ্ক, স্কুলে। খরিদা থেকে বড়বাতি হয়ে গোলবাজারে যেতে হয়। এটিই প্রধান বাজার।
একই অবস্থা শহরের গিরিময়দান স্টেশন ঘেঁষা অরোরা রেলগেটেরও। এই রেলগেট পেয়েই পূর্বদিকে গোলবাজার, রামমন্দির দ্রুত পৌঁছতে পারে পশ্চিমাংশের নাগরিকেরা। পশ্চিম দিকেই আবার গেটবাজার, একাধিক সিনেমা হল, শপিং মল, জগন্নাথ মন্দির। ফলে যাতায়াত লেগেই রয়েছে মানুষের।
শহরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী অলোক কুমার বলেন, “সেই কবে থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছি। সমাধান নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy