Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে হোটেলের কর্মীদের পাতেই মুর্গ মোসল্লম

কলকাতার ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে ফ্রিজার সাফাই করতে মন দিয়েছেন হলদিয়ার বিভিন্ন রেস্তরাঁর কর্তৃপক্ষ। অন্তত তেমনই জানাচ্ছেন সেখানের একাধিক হোটেল-রেস্তরাঁকর্মী।

হলদিয়ার একটি রেস্তরাঁ। নেই চেনা ভিড়।

হলদিয়ার একটি রেস্তরাঁ। নেই চেনা ভিড়।

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

এক সময় দিনের পর দিন ফ্রিজারে রাখা হতো কাঁচা এবং রান্না করা মাংস। কিন্তু কলকাতার ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে ফ্রিজার সাফাই করতে মন দিয়েছেন হলদিয়ার বিভিন্ন রেস্তরাঁর কর্তৃপক্ষ। অন্তত তেমনই জানাচ্ছেন সেখানের একাধিক হোটেল-রেস্তরাঁকর্মী। তাঁদের কথায়, ‘‘দিনের বাড়তি খাবার এখন বরাদ্দ থাকছে আমাদের জন্যই!’’

Advertisement

শিল্প তথা বন্দর শহর হলদিয়ায় হোটেল এবং রেস্তরাঁর ছড়াছড়ি। সেখানে নিত্যদিন ভিড় জমান খাদ্য রসিকেরা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দিনের বাড়তি খাবার বা মাংস যে, ফ্রিজে রেখে দেওয়া হতো, তা স্বীকার করেছেন বহু হোটেলেরই কর্মীরা। তবে এখন চিত্রটা বদলছে। গোটা রাজ্যেই চলছে পচা এবং বাসি মাংসের সন্ধানে প্রশাসনিক তল্লাশি। এতেই নড়েচড়ে বসেছেন রেস্তরাঁ মালিকেরা।

হোটেল কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগে যে মাংস ফ্রিজে রাখা হত, এখন তা ফেলে নষ্ট করার বদলে তাঁদের খেতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্গাচকের এক রেস্তরাঁয় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘‘এখন রাতে আর রান্না করতে হয় না। মালিক উদার চিত্তে বেঁচে যাওয়া মুর্গ মোসল্লম আমাদের পাতে তুলে দিচ্ছেন। আসলে পুরসভা যে কোনও সময়ে এসে তল্লাশি করতে পারে। সে জন্যই ওঁদের এই উদারতা।’’

হলদিয়ার বেশ কয়েকটি হোটেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই তারা ফ্রিজ পরিষ্কারে হাত দিয়েছেন। ওই সব হোটেল মালিকের বক্তব্য, ‘‘একবার সুনাম নষ্ট হলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’’ এক হোটেল মালিকের কথায়, ‘‘বিরিয়ানি বাসি হলে গ্রাহক ধরে ফেলেন। কিন্তু মাংস বাসি হলেও নতুন গ্রেভির কারণে তা ধরা যায় না।’’

Advertisement

অবশ্য ভাগাড়-কাণ্ড সামনে আসার পরে নয়, আগেও বহু ক্ষেত্রেই হলদিয়াবাসী অভিযোগ করেছেন যে, একাধিক হোটেল, চিপ ক্যান্টিন এবং রেস্তরাঁয় ভাল মুরগির সঙ্গে মরা মুরগি মিশিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে হলদিয়ার এক মাংস বিক্রেতা বলেন, ‘‘গরমে অনেক মুরগি মারা যায়। সেই মুরগি গোটা ৭০–৮০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেকেই তা কিনে নিয়ে যান। আবার রাস্তার ধারের হান্ডি বিরিয়ানির দোকানেও সাপ্লাই হয়।’’

যদিও রতন দাম নামে এক হোটেল কর্মীর দাবি, ‘‘মেলা, খেলা, সম্মেলন-সহ নানা পাইকারি অর্ডারের সময় ফ্রিজে রাখা মাংস চালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মরা বা ভাগাড় থেকে মাংস সরবরাহের প্রশ্নই নেই।’’ জনতাও যে সচেতন হয়েছেন, তা-ও মানছেন হোটেল কর্মীরা। সিটি সেন্টারের একটি নামী রেস্তরাঁর কর্মী শেখ জয়নাল বলেন, ‘‘মাংস ঠিক রয়েছে কি না, তা পরিচিত গ্রাহকেরা জানতে চাইছেন। আবার অনেকে রান্নাঘরেও যেতে চাইছেন।’’

হলদিয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘চেয়ারম্যান শ্যামল আদক একটি দল গঠন করেছেন। আগামিকাল থেকে শুরু হবে অভিযান। দেখা হবে ওদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে কি না।’’ তবে পুরসভায় যে ফুড ইনস্পেক্টর নেই, তা স্বীকার করেছেন সুধাংশুবাবু। হলদিয়ার পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে হলদিয়া টাউনশিপের মিনি মার্কেটে অভিযানে গিয়ে অনিয়ম আমাদের নজরে এসেছিল। শীঘ্রই ফের অভিযান হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.