বনমন্ত্রীর দু’পাশে ভারতী ও উমা।নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘদিনের অভ্যাস— জঙ্গলমহলে কোনও অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার হাজির থাকলে রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়করা তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতী ঘোষ পরস্পরের প্রশংসা করেই সভা শুরু করেন। কিন্তু তাল কাটল বন দফতরের অনুষ্ঠানে।
শনিবার লালগড়ে বন বান্ধব উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংসদ উমা সরেন বক্তৃতার শুরুতে মন্ত্রী, বিধায়ক, এমনকী পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের নাম করলেন একে একে। কিন্তু মঞ্চের প্রথম সারিতে থাকা ভারতীদেবীর নাম ছিল না তালিকায়। এমনকী নাম না করে পুলিশের একাংশকে দুর্নীতিপরায়ণ ‘খারাপ মানুষ’ বলতে ছাড়েননি উমাদেবী।
এ দিন বিকেলে জেলাস্তরের বন বান্ধব উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের মাঠে। প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন সাংসদ উমাদেবী। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে ছিলেন পুলিশ সুপার ভারতীদেবী। উৎসবের উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। ছিলেন রাজ্য বন দফতরের শীর্ষকর্তারা।
বক্তৃতার শুরুতেই উমাদেবী বলেন, “জঙ্গলমহলের মানুষ দুর্নীতিপরায়ণ নন। দুর্নীতি দু’রকমের হয়, অভাবজনিত এবং স্বভাবজনিত। স্বভাব দুর্নীতিপরায়ণরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাকি মানুষকে আইন ভাঙার জন্য প্ররোচিত করে। আমি জঙ্গলমহলের প্রতিটি মানুষকে বলব এই প্ররোচনায় পা দেবেন না। আইন ভাঙবেন না। সংবিধান মেনে চলুন।” সাংসদের বক্তব্য, “বহিরাগত মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ অত্যন্ত খারাপ হয়। তাদের মধ্যে কিছু আধিকারিক আছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি পুলিশের বেশির ভাগ আধিকারিক ও কর্মী ভাল। কিন্তু পুলিশের কিছু কম সংখ্যক মানুষ অত্যন্ত খারাপ। তাঁরা তাঁদের নিজেদের স্বার্থে আপনাদের আইন ভাঙতে প্ররোচিত করে আপনাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।” ‘ বেআইনি কাজকর্মের ফলে কোনও সমস্যা হলে সরাসরি তাঁকে হোয়াটস্ অ্যাপ-এ অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটির চেয়ারপার্সন উমাদেবী।
ভারতীদেবীও বক্তৃতায় উপস্থিত মন্ত্রী, বিধায়ক, আমলাদের নাম উল্লেখ করেন। বাদ পড়েন সাংসদ। ২০১১ সালের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। সাংসদের অভিযোগের জবাব দেননি।
তবে সরকারি মঞ্চে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে সাংসদের এমন মন্তব্যে অস্বস্তি ছড়িয়েছে। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাংসদ ও তাঁর অনুগামীদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক। জেলায় শাসকদলের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মে পুলিশ সুপারের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ নিয়ে বরাবরই রুষ্ট উমাদেবী। দলের অন্দরে তিনি সরব হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। সে জন্যই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সভা ছাড়া সাংসদ ও পুলিশ সুপারকে একমঞ্চে কখনও দেখা যায় না। এ দিন এক মঞ্চে দু’জনের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি ঘোরালো হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy