Advertisement
০৭ মে ২০২৪

হাতি ঠেকাতে পশ্চিমে আজ বনমন্ত্রীর বৈঠক

হাতির হানায় মৃত্যু বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে বন দফতরের কাজ নিয়ে ঊষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েও শিলিগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সকলের সামনেই বন দফতরের কর্তাদের ভর্ৎসনা করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

হাতির হানায় মৃত্যু বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে বন দফতরের কাজ নিয়ে ঊষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েও শিলিগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সকলের সামনেই বন দফতরের কর্তাদের ভর্ৎসনা করেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, দৃশ্যতই বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দিনের পর দিন এটা চললে দফতরটা রেখে লাভ কি!’’

মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়ে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে বন দফতরের আধিকারিকরা। তাই হাতির সমস্যা থেকে সমাধানের পথ খোঁজার জন্য আজ, শনিবার জেলায় বৈঠক করবেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। এ দিন দুপুরে মেদিনীপুর বন বিভাগের সভাঘরে উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে থাকবেন রাজ্যের শীর্ষ বনকর্তা থেকে জেলার মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা।

বন দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ও চূড়ামণি মাহাতো-সহ জেলার সমস্ত সাংসদ ও বিধায়কদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে থাকবেন রাজ্যের তিন জন প্রধান মুখ্য বনপাল নরেন্দ্রকুমার পাণ্ডে (সাধারণ), প্রদীপ শুক্ল (বনবল শীর্ষ) ও প্রদীপ ব্যাস (বন্যপ্রাণ)। এ ছাড়া থাকবেন মুখ্য বনপাল (পশ্চিম) নীরজ সিংঘল, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলার বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ, জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার।।

বৈঠকের আগে শনিবার সকালে প্রথমে নয়াগ্রামের আমজাম গ্রামে একটি বহুমুখী ভেষজ উদ্যান পরিদর্শন করবেন বনমন্ত্রী। ভেষজ উদ্ভিদ ও গুল্মচাষের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য এটি রাজ্যের মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ। আরও কয়েকটি কর্মসূচি সেরে মেদিনীপুরে গিয়ে বৈঠক করবেন বিনয়বাবু।

বন দফতরের দাবি, ঝাড়খণ্ডের দলমায় হাতিদের থাকার অনুকূল পরিবেশ আর নেই। ফলে, দলমা থেকে আসা দেড়শোর বেশি পরিযায়ী হাতিরাও এখন বেশির ভাগ সময় পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে কিছু হাতি পাকাপাকি ভাবে থেকে গিয়ে ‘রেসিডেন্ট’ হয়ে গিয়েছে। এই রেসিডেন্ট হাতিগুলি সারা বছর লোকালয়ে ঢুকে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করছে, মানুষ মারছে।

বন দফতরের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৩০টি রেসিডেন্ট হাতি রয়েছে। হাতিদের উৎপাতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দানা বাড়ছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারের বৈঠকে মূলত হাতির সমস্যা কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে সব মহলের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করবেন বনমন্ত্রী।

বৈঠকে খতিয়ে দেখা হবে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরিকল্পনা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, পঞ্চায়েত, ব্লক ও স্কুলস্তরে হাতি নিয়ে কর্মশালা। জঙ্গল এলাকার গ্রামে, স্কুলে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে হাতি সম্পর্কে সচেতনতামূলক ‘পাপেট শো’, চিত্র প্রদর্শনী। বন্যপ্রাণ বিধি মেনে হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে গ্রামবাসী ও বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের পুরস্কার প্রদান ইত্যাদি। হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুরুষ হাতির নির্বীজকরণ জরুরি বলে মনে করেন বন কর্তাদের একাংশ। কিন্তু বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন থাকায় এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়।

বন আধিকারিকদের বক্তব্য, হাতিদের স্বাভাবিক গতিপথে বাধা দিয়ে তাদের লোকালয়ে ঢোকা আটকানো সম্ভব নয়। হাতি যাতে লোকালয়ে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি দরকার। পাশাপাশি, পড়শি ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্যের বন দফতরের সঙ্গেও সমন্বয় থাকা দরকার। বৈঠকে এসব নিয়েও আলোচনা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forest ministry Elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE