জৈব-অজৈব আবর্জনা আলাদা হচ্ছে না। সব একসঙ্গে গিয়ে জমছে ধর্মার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার ধারে স্তূপকার আবর্জনা। নিয়মিত সাফাই হয় না বলে অভিযোগ। গরমে জঞ্জাল পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর বর্ষায় হাঁটাচলা দুষ্কর। পুর এলাকায় ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ গড়তে কেন্দ্র নয়া আইন করেছে। সেই মতো, ১০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার পুর এলাকায় আগামী দু’বছরের মধ্যে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আর ১০ লক্ষের কম জনসংখ্যার পুর-এলাকায় এই ব্যবস্থা চালু করতে হবে তিন বছরের মধ্যে। এইটুকুই মেদিনীপুরবাসীর আশা। আর বাকিটা শুধুই জঞ্জাল-যন্ত্রণা।
শহরের আবর্জনা ধর্মার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। কিন্তু সেখানে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা নেই। ফলে শহরের প্রবেশপথ ধর্মা থেকে প্রতিনিয়ত দূষণ ছড়াচ্ছে। জৈব-অজৈব আবর্জনা আলাদা করতে মেদিনীপুরে বাড়ি বাড়ি বালতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু তাও মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
২০০৮ সালে বর্তমান ৫ নম্বর (পুরনো ২৩) ওয়ার্ডের প্রতি বাড়িতে লাল ও নীল রঙের বালতি দেওয়া হয়। জৈব আবর্জনার জন্য লাল ও অজৈব আবর্জনার জন্য নীল রঙের বালতি দেওয়া হয়। ঠিক হয়, বাড়িতে এই দু’টি বালতিতেই আবর্জনা সংগ্রহ করে রাখতে বলা হবে। তারপর পুরসভার গাড়ি এসে সেই আবর্জনা তুলে নিয়ে যাবে। সব ওয়ার্ডে বালতি বিলির কাজ শেষ না হওয়ায় লক্ষ্যপূরণ হয়নি। পুরপ্রধান প্রণব বসুর যুক্তি, “বাড়ি বাড়ি আলাদা করা আবর্জনা নিয়ে এসে লাভ কী? ডাম্পিং গ্রাউন্ডে তো একই সঙ্গে সব ফেলা হচ্ছে। আগে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করা দরকার। তাই বালতি দেওয়ার বন্ধ করে দিয়েছি।” ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবশ্য এখনও বালতি দেওয়ার কাজ চালু রয়েছে। কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীর কথায়, “বালতি দেওয়ায় কারও বাড়ির সামনে ভ্যাট করতে হয়নি। এই পদ্ধতি সকলে চালু করলে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের পথও সুগম হবে।” ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও বালতি দেওয়ার কাজ হবে বলে জানিয়েছেন পুর পারিষদ তথা কাউন্সিলর শিপ্রা মণ্ডল।
জেলার এই সদর শহরে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নানা কাজে আসেন। শহরের জনসংখ্যাও বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবর্জনার পরিমাণ। অবিলম্বে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা।
গত এপ্রিলে নয়া নির্দেশ কার্যকর হওয়ার পরে অবশ্য নড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৮টি পুরসভার কাছে আবর্জনা সংক্রান্ত নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণববাবু বলেন, “আমরা যাবতীয় নথি পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর আমাদের যা জানানো হবে সেই অনুযায়ী কাজ করব।”
নতুন পদ্ধতিতে তিনটি পর্যায়ে আবর্জনা ভাগের কথা বলেছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রক। প্রথমত, জৈব আবর্জনা। আর অজৈব আবর্জনার দু’টি ভাগ— প্লাস্টিক, ধাতু, কাঠ এবং ন্যাপকিন, মশা মারার যন্ত্র প্রভৃতি। একাধিক পুরসভা যৌথভাবেও আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।
আবর্জনা স্তূপাকার হয়ে থাকলেই আকাশে চিল, শকুন উড়ে বেড়ায়। ফলে বিমান দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ নিয়ে একাধিকবার বায়ুসেনার পক্ষ থেকেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা নিয়ে আগ্রহী শালবনির ট্যাঁকশাল, কলাইকুণ্ডার বায়ুসেনার বিমান ঘাঁটি কর্তৃপক্ষও। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ছোট পুরসভার একার পক্ষে এই ব্যবস্থা গড়া কঠিন। কাছাকাছি থাকা ক্ষীরপাই, খড়ার, রামজীবনপুরের মতো পুরসভাগুলি একসঙ্গে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করলে ভাল হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মেদিনীপুর পুরসভায় আবর্জনা থেকে সার তৈরির প্রকল্প না হয় গড়া গেল। অত আবর্জনা একটা শহর থেকে পাওয়া সমস্যার। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহর মিলে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প গড়লে লক্ষ্যপূরণ সহজ হবে।’’
কবে আবর্জনার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে, সেটাই দেখার।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy