Advertisement
১৬ মে ২০২৪

আশা জাগিয়েও হার, প্রশ্ন বিজেপির অন্দরেই   

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসে বিজেপি।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৬:৩৩
Share: Save:

আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরে সাফল্যের মুখ দেখতে পেল না বিজেপি। রাজ্যের অন্যান্য জেলায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে শাসক দলকে পিছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। তবে তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এলেও এ বারের মতো জয় অধরাই থেকে বিজেপির।

তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর জয়ের ব্যবধান আগের চেয়ে কমলেও বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করকে প্রায় ১ লক্ষ নব্বই হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস সামন্তকে প্রায় এক লক্ষেরও বেশী ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। তৃণমূলের শক্তঘাটিতে বিরোধী বামকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে বিজেপির উঠে আসার আভাস মিলেছিল কয়েক বছর আগেই। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় তৃণমূলের জয়ের সঙ্গে ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ। বিরোধী বামেদের ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল ৩৫ শতাংশের কিছু বেশি। বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৮ শতাংশ ভোট। আড়াই বছর পর তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী পেয়েছিলেন প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী মন্দিরা পন্ডা পেয়েছিলেন প্রায় ২২ শতাংশ ভোট । তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী অম্বুজ মহান্তি পেয়েছিলেন ১৫ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি হয়েছিল দ্বিগুণের কাছাকাছি।

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। এমনকী তমলুকের শ্রীরামপুর-১ পঞ্চায়েত ও রামনগরের একটি পঞ্চায়েতে বিজেপি বোর্ড গঠন করে। যদিও পরে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সহ কয়েকজন বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তৃণমূল প্রার্থীদের সঙ্গে বিজেপির টক্কর জমে ওঠে। গত জানুয়ারি মাসে কাঁথি শহরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জনসভা করেন। জনসভার ঠিক পরেই তৃণমূল-বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কাঁথি। এ নিয়ে দু’দলে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলে। এরপর ভোটের প্রচারে হলদিয়ায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রামনগরে জনসভা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এমন হাইপ্রোফাইল নেতাদের প্রচারের পরেও জেলায় বিজেপির প্রার্থীদের জয় অধরা থেকে যাওয়ায় হতাশ দলের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার কোলাঘাট ভোটগণনা কেন্দ্রের সামনে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিজেপি নেতা রতন পট্টনায়েক, কোলাঘাটের বিজেপি নেতা তপন বক্সী বলেন, ‘‘যে ভাবে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম তাতে জয়ের আশা করেছিলাম। কিন্তু জয় না হওয়ায় হতাশ হয়েছি। তৃণমূলের ছাপ্পা-রিগিংয়ের কাছে হেরে গেলাম।’’ তমলুকের বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্কর বলেন, ‘‘কী ভাবে নন্দীগ্রাম, হলদিয়ায় ভোট হয়েছে তা সকলেই জানেন। তাই এমন ফল হয়েছে। এতে মানুষের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত হয়নি।’’

রাজনৈতিক মহলের মতে, তমলুকের বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করকে নিয়ে দলের একাংশের আপত্তি ছিল। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মত দলের একাংশের। এ ছাড়াও জনসভায় সিদ্ধার্থের কিছু মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। একই ভাবে কাঁথিতে দলীয় প্রার্থী দেবাশিস সামন্তের প্রার্থীপদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। দলের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করেছিল। ফলে ভোটারদের কাছে এ সবের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের দাবি, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে হলদিয়া, নন্দীগ্রাম-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি। ফলে মানুষের বিপুল সমর্থন থাকা সত্ত্বেও আমাদের ফল আশানুরূপ হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE