Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩

ভেঙে গেল তিনমূর্তি-জুটি

জেলা পরিষদের কোনও কর্মসূচি হোক কিংবা দলের কোনও কর্মসূচিতে—প্রায়ই একসঙ্গে দেখা যেত রমা, উত্তরা ও অজিতকে। ওই সব কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য তিনজন একই গাড়ির সওয়ারি—এটাও হামেশাই দেখা যেত।

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদের অবস্থান বিক্ষোভেও একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল তিনজনকে।  মাঝে (চিহ্নিত) রমাপ্রসাদ গিরি। ফাইল চিত্র

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদের অবস্থান বিক্ষোভেও একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল তিনজনকে। মাঝে (চিহ্নিত) রমাপ্রসাদ গিরি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

দলের অন্দরে অনেকের কাছে তাঁরা ‘তিনমূর্তি’ নামে পরিচিত ছিলেন। কেউ কেউ বলতেন ‘জুটি’। পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই ‘জুটি’ ভেঙে গেল! কারণ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন রমাপ্রসাদ গিরি। একদা ছায়াসঙ্গী দল ছাড়ায় এখন দলের মধ্যেই নানা প্রশ্নের মুখে পড়ছেন অজিত মাইতি এবং উত্তরা সিংহ। অজিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি। উত্তরা মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি।

Advertisement

জেলা পরিষদের কোনও কর্মসূচি হোক কিংবা দলের কোনও কর্মসূচিতে—প্রায়ই একসঙ্গে দেখা যেত রমা, উত্তরা ও অজিতকে। ওই সব কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য তিনজন একই গাড়ির সওয়ারি—এটাও হামেশাই দেখা যেত। অনেকে বলছেন, একদা জেলার এক পুলিশ কর্ত্রীই নাকি এই ‘জুটি’ তৈরি করে দিয়েছিলেন। ওই পুলিশ কর্ত্রী এক সময়ে জেলার ‘সর্বেসর্বা’ ছিলেন। তাঁর ইশারা ছাড়া নাকি এখানে গাছের পাতাও নড়ত না!

যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ দল ছাড়ায় জেলায় শাসক দলের কোন্দল আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। দলের কর্মীদের দ্বারাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত ‘বিদ্ধ’ হচ্ছেন অজিত, উত্তরা।

অনেকে বলছেন, অজিতদের প্রশ্রয়েই রমাপ্রসাদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। তাঁদের জন্যই দলের অনেককে পিছনে ঠেলে তিনি ‘প্রভাবশালী’ হয়ে উঠেছিলেন। দলে থেকে নাকি দলকে দুর্বল করতেও সক্রিয় ছিলেন রমাপ্রসাদ। সব জানলেও ব্যবস্থা নেননি অজিতরা। ওই যুব নেতাকে ‘মাথায় তুলে’ রেখেছিলেন তাঁরা। অন্তত দলের একাংশ কর্মীর নালিশ এমনই। ফেসবুকে শিবরাম বেরা নামে এক তৃণমূল কর্মীর কটাক্ষ, ‘পশ্চিম মেদিনীপুরের কাকা-ভাইপোর জুটি ভেঙে গেল।’ তৃণমূল কর্মী সুগত চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘কাকা, ভাইপো, পিসি। জেলা পরিষদে বসে দল করা তিনমূর্তি। ভাইপো আগে গেল। কাকা, পিসি কবে যায়।’ জয়ন্ত মাইতি নামে এক তৃণমূল কর্মীর আবার খোঁচা, ‘কে বলেছে ভেঙে গেছে? আবার ওপারে মিলে যাবে। কাকা হাওয়া বুঝতে পাঠিয়েছে।’ তৃণমূল কর্মী সুশান্ত ঘোষের আবার মন্তব্য, ‘অনেক জুটিকেই ভেঙে ফেলার সময়ে এসেছে। আবর্জনা দূর হোক।’ ‘ভাইপো গেল, কাকা কবে যাবে?’ এমন মন্তব্যও ঘুরপাক খাচ্ছে ফেসবুকে। মুস্তাক শা নামে এক তৃণমূল কর্মীর মন্তব্য, ‘ভাঙল না আবার গড়বে দেখো।’ কেউ কেউ আবার প্রশ্ন করেছেন, ‘যারা এনাদের জন্য দল ছেড়েছে, তারা কি আবার ফিরবে?’

Advertisement

‘বিদ্রোহী’ কর্মীরা জেলার এক- এক নেতার অনুগামী বলে দলের অন্দরে পরিচিত। যেমন শিবরামকে এক সময়ে বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষের সঙ্গে দেখা যেত। সুগতকে দেখা যেত দলের প্রাক্তন মেদিনীপুর শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যার সঙ্গে। জয়ন্ত আবার মেদিনীপুরের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীর অনুগামী বলে পরিচিত।

ছায়াসঙ্গী হঠাৎ দল ছাড়ল কেন? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির সাফ জবাব, ‘‘ও দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। দলেরই অনেকে তো সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করছেন? অজিত বলছেন, ‘‘দল সবদিকেই নজর রেখেছে। ঠিক সময়ে ঠিক ব্যবস্থাই নেবে।’’ তবে রমাপ্রসাদ ছায়াসঙ্গী ছিলেন বলে মানতে নারাজ তিনি। অজিতের দাবি, দলের স্বার্থেই তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। একই দাবি উত্তরারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.