পঞ্চায়েতের তরফে বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র
বাংলা কিংবা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে একশো দিনের কাজ, যাবতীয় সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের বরাদ্দ থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। হলদিয়া মহকুমার সুতাহাটা ব্লকের গুয়াবেড়িয়াতে শাসক দলের পঞ্চায়েতের এমন ‘তোলাবাজি’ নিয়ে সরব হয়েছেন উপভোক্তারা। এমন অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল।
উপভোক্তাদের অনেকের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজে সরকারি অর্থ যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে কেটে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ‘এমন কোনও ঘটনা জানা নেই’ বলে দায় এড়িয়েছে ব্লক প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুনাটিয়া গ্রামের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছিলাম। গত ১ জুন জুন ওই টাকা থেকে এক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে তার বিনিময়ে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে রসিদ দেওয়া হয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনাটিয়ায় এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়। খেজুরবেড়িয়া, গুয়াবেড়িয়া-সহ একাধিক গ্রামে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া উপভোক্তাদের কাছ থেকে এ ভাবে টাকা কেটে নেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ আগেও উঠেছে। জঙ্গলমহলে এই নিয়ে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হতে দেখা গিয়েছে মানুষকে। এ বার সুতাহাটা ব্লকের গুয়াবেড়িয়া গ্রামে শাসক দলের জন প্রতিনিধিদের টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিকমহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
টাকা দেওয়ার রসিদ। নিজস্ব চিত্র
শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে এমন ‘সহযোগিতা’ বাধ্যতামূক করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন চাইছেন সরকারি পরিষেবা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাক। তখন সরকরি পরিষেবা পেতে পঞ্চায়েতের তহবিলে এমন ‘নজরানা’ কেন?
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘এটা একেবারেই হওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া, এটা আর্থিক অনিয়মের সামিল। আইনত দণ্ড হওয়া উচিত পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের।’’ একই প্রতিক্রিয়া বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ কুমার দাসের। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমুলের রাজত্বে সব কিছু সম্ভব। যাতে তাঁরা যা খুশি করতে পারেন সে জন্যই বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন।’’
টাকা নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করলেও পঞ্চায়েতপ্রধান শেখ সাবিরউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পঞ্চায়েতগুলিকে তহবিল বাড়ানোর জন্য বলেছিলেন। তা ছাড়া আমাদের পঞ্চায়েতে নিজস্ব তহবিল তৈরির কোনও উৎস নেই বললেই চলে। তাই বোর্ড মিটিং ডেকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
যদিও সুতাহাটার বিডিও সঞ্জয় শিকদারের দাবি, ‘‘এমন কোনও ঘটনা জানা ছিল না। কী ভাবে এটা হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ পঞ্চায়েতের তহবিল বাড়ানোর এমন কায়দায় বিব্রত শাসক দল। সুতাহাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অমিয় কুমার দাস বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে উপকৃতদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া উচিত নয়। কী হয়েছে তা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’’
এ বিষয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy