নিয়ম না মেনেই কাজ চলছে জোরকদমে। সোহম গুহর তোলা ছবি।
রাজ্যে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তাজপুর পরিদর্শনে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন সৈকতে গিজগিজে হোটেল, লজ দেখে বিরক্ত হয়েছিলেন। তাজপুর সৈকতে সব ধরনের নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন তিনি। সেটা ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস। তারপর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন তাজপুর-সহ জেলার সমস্ত সৈকতে সব রকমের নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
নিষেধাজ্ঞা বহাল এখনও বহাল। ‘কোস্টাল রেগুলেটিং জোন’-এর আওতায় পড়ায় তাজপুর তটভূমিতে যে কোনও ধরনের নির্মাণ বেআইনি। তবে সৈকতের চেহারায় সে ছাপ নেই।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর জেলা প্রশাসন নড়ে বসেছিল। ২০১৪ সালে তাজপুর সৈকতে চারটি অবৈধ হোটেল ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে তিনটি হোটেল ২০১৬ সালের অক্টোবরেও দাঁড়িয়ে আছে বহাল তবিয়ৎ। রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে। শুধু নাম গিয়েছে বদলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত চার বছরে প্রশাসনের নাকের ডগায় নয় নয় করে আরও ১৭-১৮টি বেআইনি হোটেল, লজ রমরমিয়ে ব্যবসা করছে।
তাজপুর সৈকতের হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল দাস অভিযোগ করেন, “চারটি অবৈধ হোটেল ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। এখনও অবৈধ ভাবে একের পর এক হোটেল তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।” সম্প্রতি তেমনই এক অবৈধ নির্মাণের কাজ চলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা রামনগর-১ ব্লক প্রশাসন হোটেলটি অবৈধ ও বেআইনি বলেই দায় সেরেছেন। শনিবারও সেই হোটেল নির্মাণের কাজ চলেছে প্রকাশ্যেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কিছু হোটেল মালিকও এই নির্মাণের বিপক্ষে। তাঁদের দাবি, ‘‘মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দু’একজন নির্মাণ কর্মীকে ধরে পুলিশ। তাঁরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যান। বেআইনি হোটেলের মালিককে কোনও দিন গ্রেফতার করা হয় না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১২সালে মুখ্যমন্ত্রী যখন নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছিলেন, তখন তাজপুরে ছিল ১৬টি হোটেল। এখন সেই সংখ্যাটা ১৯। অর্থাৎ নিষিদ্ধ হওয়ার পর চালু হয়েছে আরও তিনটি। রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতি বা দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ— কাউকেই বেআইনি নির্মাণ বন্ধের বিষয়ে উদ্যোগী হতে দেখা যায় না।
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারীর অবশ্য শনিবার দাবি করেছিলেন, “কোনও ভাবেই বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করা হবে না। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক নির্মাণ কর্মীর মৃত্যুর পর পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্ত, রামনগর-১ বিডিও অনুপম বাগ ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার-সহ এক প্রতিনিধি দল তাজপুর পরিদর্শন করে এসেছেন। সোমবার অফিস খুললেই বেআইনি হোটেল লজ মালিকদের নোটিস ধরানো হবে।’’
বুধবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য নোটিস দেওয়া হয়নি কোনও হোটেল মালিককেই। প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য আবারও দাবি করেছেন চলতি সপ্তাহেই নোটিস দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy