Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
midnapore

Lata Mangeshkar Death: খালি পায়ে উঠেছিলেন মঞ্চে

উদ্যোক্তাদের মনে পড়ছে, জমির টিকিটের দাম ছিল ৫০, ৭৫, ১০০ টাকার। চেয়ারের টিকিটের দাম ছিল ১৫০, ২০০, ৩০০ টাকা।

মেদিনীপুরের মঞ্চে লতা।

মেদিনীপুরের মঞ্চে লতা। সংগৃহীত

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৬
Share: Save:

চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। শহর মেদিনীপুরেও রয়েছে সুর সম্রাজ্ঞীর স্মৃতি। তাঁর প্রয়াণে স্মৃতিকাতর শহর।

তিন দশকেরও বেশি আগে শহরে তিনি যখন এসেছিলেন তখন তাঁর বয়স ৫৭ বছর। দিনটা ছিল ১৯৮৬ সালের ২ মার্চ। ওই দিন মেদিনীপুরে হয়েছিল ‘লতা মঙ্গেশকর নাইট’। শ্রোতা ছিলেন প্রায় কুড়ি হাজার।

সেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপকদের অন্যতম ছিলেন বাবলু চক্রবর্তী। বাবলুর স্মৃতিচারণা, ‘‘সিঁড়ির সামনে জুতো খুলে রেখেছিলেন। জুতো খুলে রেখেই মঞ্চে খালি পায়ে উঠেছিলেন লতাজি।’’ সে দিন শ্রোতাদের মধ্যে থাকা কার্তিকচন্দ্র ধর বলছিলেন, ‘‘মনে আছে, তিন-তিনবার মঞ্চ থেকে নেমেছিলেন। গানের ফাঁকে। গ্রিনরুমে গিয়েছিলেন। শাড়ি বদলে মঞ্চে উঠেছিলেন।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘নতুন নতুন শাড়িতে ওঁকে যেন সাক্ষাৎ মা সরস্বতী মনে হচ্ছিল। শ্রোতাদের প্রতি হাতজোড় করে নমস্কার করেছিলেন বারবার। সেই ছবি আজও স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল।’’ শহরের স্যান্টাফোকিয়া অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং দেবছায়া নবারুণ সঙ্ঘের যৌথ উদ্যোগে সেদিন সঙ্গীতানুষ্ঠান হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠে। কুড়ি হাজার শ্রোতার মধ্যে প্রায় দশ হাজারই ছিল মাটিতে। বাকি দশ হাজার চেয়ার। বাবলু বলছিলেন, ‘‘পুরো মাঠই ভর্তি ছিল। অত চেয়ার মেদিনীপুরে ছিল না। কলকাতা-সহ নানা জায়গা থেকে চেয়ার আনা হয়েছিল।’’

সারা রাত ধরে অনুষ্ঠান চলেছিল। প্রথমপর্বে ছিলেন মুম্বইয়ের শিল্পীরা, দ্বিতীয়পর্বে কলকাতার। লতার পাশাপাশি মুম্বই থেকে এসেছিলেন তাঁর বোন ঊষা মঙ্গেশকর, সুরেশ ভাটকার, শৈলেন্দ্র সিংহ, সাব্বির কুমার প্রমুখ। কলকাতার শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা প্রমুখ। বাবলু জানাচ্ছেন, ‘‘লতাজি রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত গেয়েছিলেন। তারপরে বাংলার শিল্পীদের অনুষ্ঠান ছিল।’’ বাবলু বলছিলেন, ‘‘সাব্বির কুমারকে আনার কথা ছিল না। লতাজি বলেছিলেন, সাব্বিরকেও নাও। শুরুতে পারিশ্রমিক হিসেবে চুক্তি ছিল ৬ লক্ষ টাকার। লতাজি-সহ চার শিল্পীর। শিল্পী-তালিকায় সাব্বির কুমার যোগ হতে অঙ্কটা ৫০ হাজার টাকা বেড়ে যায়। তিনি জানাচ্ছেন, লতা মঙ্গেশকরকে প্রথম মেদিনীপুরে আনার চেষ্টা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। দু’বছর ধরে চেষ্টা চলে। বাবলু বলেন, ‘‘একবার আমরা ১ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলাম। পরে সেই টাকা পুরোটাই ফেরত দেন উনি। সেটা ১৯৮৫ সাল। পরে আবার মুম্বইয়ে ওঁর বাড়ি প্রভুকুঞ্জে গিয়ে কথা বলি। ওঁর বাড়িতে চার হাতের সরস্বতীর মূর্তি রয়েছে। এই মূর্তিটাই উনি পুজো করতেন।’’

স্যান্টাফোকিয়া অ্যাথলেটিক ক্লাবের যুগ্ম- সম্পাদক গৌরীশঙ্কর সরকারের স্মৃতিচারণা, ‘‘সুন্দর অনুষ্ঠান হয়েছিল সেদিন। উনিও বেশ খুশি হয়েছিলেন। প্রচুর গান শুনিয়েছিলেন।’’ তিনটি অনুষ্ঠানের জন্য সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন লতা। প্রথম অনুষ্ঠানটি হয়েছিল মেদিনীপুরে। দ্বিতীয়টি শিলিগুড়িতে, তৃতীয়টি কাঁচরাপাড়ায়। বাবলু জানালেন, অনুষ্ঠানের সব মিউজিশিয়ান মুম্বইয়েরই ছিলেন। কোরাস শিল্পীরাও মুম্বইয়ের ছিলেন। মুম্বইয়ের দু’জন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। আউটপুট ছিল কলকাতার এক ডেকোরেটর্সের। বিমানে কলকাতায় এসেছিলেন। সকালে পৌঁছে কলকাতার একটি হোটেলে উঠেছিলেন। সড়কপথে মেদিনীপুরে আসেন। মেদিনীপুরে এসে সার্কিট হাউসে ওঠেন। সেখান থেকেই পৌঁছন অনুষ্ঠানস্থলে। বাবলু শোনাচ্ছেন, ‘‘পুলিশি প্রহরায় অনুষ্ঠানের
টিকিট ছাপা হয়েছিল। কলকাতায়। অনুষ্ঠানের অভ্যর্থনা কমিটিতে ডিএম-এসপিরাও ছিলেন।’’

টিকিটের দাম কত ছিল?

উদ্যোক্তাদের মনে পড়ছে, জমির টিকিটের দাম ছিল ৫০, ৭৫, ১০০ টাকার। চেয়ারের টিকিটের দাম ছিল ১৫০, ২০০, ৩০০ টাকা। অগ্রিম ১ লক্ষ টাকা জমা করতে হত শিল্পীর ম্যানেজারের কাছে। সে জন্য মেদিনীপুরের ৫০ জনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের প্রত্যেককে ওই অর্থমূল্যের টিকিট দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে ২টি করে গেস্ট টিকিট দেওয়া হয়েছিল।

শহরের চন্দন সেনগুপ্ত শোনাচ্ছেন, ‘‘তখন কলেজে পড়ি। ওই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলাম।’’ এর আগেই মেদিনীপুরে এসে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন কিশোরকুমার। সে কথা জানানো হয়েছিল লতা মঙ্গেশকরকে। শুনে শহরে আসার ক্ষেত্রে আর না করেননি তিনি। সেদিনের অনুষ্ঠানের কয়েকটি ছবি বাবলু তাঁর অ্যালবামে যত্ন করে রেখেছেন। রবিবার পড়ন্ত বিকেলে সেগুলি দেখেই চলছিল স্মৃতি হাতড়ানো।

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore lata mangeshkar performance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE