Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তিন বার উদ্বোধন, বন্ধই বাস টার্মিনাস

দু’বার সিপিএম, একবার তৃণমূল— গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে নির্মিত বাস টার্মিনাস ও মার্কেট কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হয়েছে তিন বার। কিন্তু গত ১২ বছরে সেখান থেকে কোনও বাস ছাড়েনি। একটি টাকার ব্যবসাও করতে পারেননি দোকান ঘর ভাড়া নেওয়া ব্যবসায়ীরা। করবেন কী করে? চালুই তো হয়নি সেই কমপ্লেক্স।

শিলান্যাসের ফলকই সার। আজও চালু হয়নি গেঁওখালি মার্কেট কমপ্লেক্স ও বাস টার্মিনাস। — নিজস্ব চিত্র।

শিলান্যাসের ফলকই সার। আজও চালু হয়নি গেঁওখালি মার্কেট কমপ্লেক্স ও বাস টার্মিনাস। — নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
মহিষাদল শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

দু’বার সিপিএম, একবার তৃণমূল— গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে নির্মিত বাস টার্মিনাস ও মার্কেট কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হয়েছে তিন বার। কিন্তু গত ১২ বছরে সেখান থেকে কোনও বাস ছাড়েনি। একটি টাকার ব্যবসাও করতে পারেননি দোকান ঘর ভাড়া নেওয়া ব্যবসায়ীরা। করবেন কী করে? চালুই তো হয়নি সেই কমপ্লেক্স।
মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে তৈরি হওয়া গেঁওখালিতে মার্কেট কমপ্লেক্স ও বাস টার্মিনাসে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় অসামাজিক কাজ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হচ্ছে দোকান ঘর, শৌচাগার, আলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে গেঁওখালিতে মার্কেট কমপ্লেক্স ও বাস টার্মিনাস তৈরি করে সিপিএম পরিচালিত মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। ২০০৩ ও ২০০৬ সালে দু’দফায় তারা প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ১৫টি দোকান ঘর, বাসস্ট্যান্ড তৈরি করে। দু’বারই ঘটা করে উদ্বোধনও হয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত সমিতি দখল নেয় তৃণমূল। তারা ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বাসস্ট্যান্ড ও মার্কেট কমপ্লেক্সের সংস্কার করেন। ৮ অগস্ট ২০১১তে ফের শিলা ফলক লাগিয়ে উদ্বোধন করে নতুন সমিতি।

এরই মধ্যে নাটশাল ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত আরও ১৫টি দোকান ঘর তৈরি করে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে। কিন্তু সে সব কিছুই আপাতত নিষ্ফল।

২০১১তে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর অবশ্য টার্মিনাসে বাস ঢোকা শুরু হয়েছিল। তবে দু’একদিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ ওই টার্মিনাসে বাস দাঁড় করানোর সমস্যা রয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সামসেল আরেফিন জানান,‘‘বাস টার্মিনাসের প্লাটফর্ম মোরামের হওয়ায় সেখানে বর্ষাতে বাস রাখার সমস্যা হবে। তা ছাড়াও বাস টার্মিনাসে নামার রাস্তাও পিচের করতে হবে। না হলে ওখানে বাস রাখা যায় না।’’

জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার বেরাও মোরামের প্লাটফর্ম এবে পিচ রাস্তার দাবি তুলে প্রায় একই কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘বাস টার্মিনাস চালু হলেই আমরা সেখানে বাস রাখব। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।’’

এ দিকে বাসস্ট্যান্ড চালু না হওয়ায় দোকানঘর গুলিও চালু করা যায়নি। জানা গিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির তৈরি দোকানগুলির বিলি হয়ে গেলেও, তারা জন্য কোনও ভাড়া পায় না পঞ্চায়েত সমিতি। তবে সম্প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কয়েকটি ঘরে চালু হয়েছে দোকান। কিন্তু তাঁদের তেমন বিক্রিবাটা নেই বলেই অভিযোগ করেছেন দোকান মালিকরা।

গেঁওখালি মার্কেট কমপ্লেক্সে একটি দর্জির দোকান করেছেন সুপবিত্র জানা। তিনি জানালেন এখানে, ‘‘বাস টার্মিনাস চালু না হওয়ায় মার্কেট কমপ্লেক্সের অধিকাংশ দোকান চালু হয়নি। আমরা যে ক’জন দোকান শুরু করেছি তাঁদেরও ব্যবসা তেমন হচ্ছে না। তাই শীঘ্রই বাস টার্মিনাস চালু করার দাবি জানাই।’’

এ দিকে প্রায় পরিত্যক্ত এই এলাকায় রাতের অন্ধকারে অসামাজিক কাজকর্ম হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। নাটশালের বাসিন্দা শেখ সাইফুল, পঞ্চানন সামন্তরা জানান এক যুগ আগে এই বাস টার্মিনাস তৈরি হয়েছে। টার্মিনাসের শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। বাস টার্মিনাসে থাকা সৌর-আলো গুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাতে দুষ্কৃতীদের আড্ডা বসছে। টার্মিনাস চালু হয়ে গেলে এ সব বন্ধ হবে। তাই দ্রুত টার্মিনাস চালু করার দাবি তাঁদের।

এ দিকে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তীর আশ্বাস বাস মালিকদের দাবি অনুযায়ী রাস্তা ও প্লাটফর্মের কাজ শুরু করা হবে। ২০১২ সালে রাস্তা তৈরির জন্য আমরা পূর্ত দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। তখন কাজ করা যায়নি। মহকুমাশাসকের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বার কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE