Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মিলছে না দিনের হিসাব, বিপাকে স্কুল

এপ্রিল মাসে স্কুল হয়েছে ২৩ দিন। কিন্তু মিড-ডে মিলের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১৫ দিনের। মে মাসে ক্লাস হয়েছে ১৭ দিন। টাকা বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬ দিনের। এই ছবি, কমবেশি পূর্ব মেদিনীপুরের সর্বত্রই। বাকি দিনগুলিতে পড়ুয়াদের জন্য খাবার জোগাড় করতে হিমসিম প্রাথমিক স্কুল ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০০:৪০
Share: Save:

এপ্রিল মাসে স্কুল হয়েছে ২৩ দিন। কিন্তু মিড-ডে মিলের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১৫ দিনের।

মে মাসে ক্লাস হয়েছে ১৭ দিন। টাকা বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬ দিনের। এই ছবি, কমবেশি পূর্ব মেদিনীপুরের সর্বত্রই। বাকি দিনগুলিতে পড়ুয়াদের জন্য খাবার জোগাড় করতে হিমসিম প্রাথমিক স্কুল ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে উচ্চ মহলে। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন জেলাশাসক।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতি শিক্ষাবর্ষেই কয়েকটি মাসে স্কুলের কর্মদিবসের চেয়ে কম দিনের জন্য মিড-ডে মিলের অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ফলে পড়ুয়াদের খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে সমস্যা মুখে পড়তে হচ্ছে। সমস্যার কথা তুলে ধরে জেলার বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। দাবি, বিদ্যালয়ের ক্লাসের দিন অনুযায়ী মিড-ডে মিলের টাকা বরাদ্দ করতে হবে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও সমস্যা আছে কিনা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’ সংসদ সভাপতি মানস দাসের দাবি, ‘‘কোনও মাসে কম বরাদ্দ হতে পারে। তার জন্য সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, সংসদের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী কার্যদিবস এবং মিড-ডে মিলের বরাদ্দ মিলছে না। যেমন ধরা যাক, জুন মাসে ক্লাস হয়েছে ১৯, অথচ মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৬ দিনের। নভেম্বর মাসে ২৪দিন স্কুল খোলা থাকার কথা। কিন্তু মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২২দিনের। আবার এর বিপরীতও আছে। যেমন ২০১৭ জানুয়ারি মাসে ক্লাস হওয়ার কথা ২১ দিন কিন্তু মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২২ দিনের। কিন্তু অভিযোগ, যে মাসে বরাদ্দ বেশি বলে ধরা হয়েছে, সে মাসে যে স্কুলগুলি বেশি টাকা পাচ্ছে তেমন নয়। মিড-ডে মিলের টাকা পেতে গেলে ক্লাস হয়েছে এমন প্রমাণ দেখাতে হয়। ফলে ওই মাসের টাকা দিয়ে যে অন্য মাসগুলি ঘাটতি পূরণ সম্ভব তাও নয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি খোলা থাকার দিনে ছাত্রছাত্রীদের দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। সে জন্য সরকারি ভাবে চাল বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। সঙ্গে সব্জি-ডিম প্রভৃতি তরকারি রান্না এবং জ্বালানি খরচ বাবদ অর্থ বরাদ্দ হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৩২৬২টি প্রাথমিক এবং ১৪১৯ টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাবর্ষের প্রতিটি মাসে বিদ্যালয়ের মোট কার্যদিবসের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা রয়েছে। একইভাবে প্রতিটি মাসে কতদিনের জন্য মিড-ডে মিলের অর্থ বরাদ্দ করা হবে জানিয়ে দেওয়া হয়।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপ ভৌমিকের অভিযোগ, ‘‘এমনিতেই যা বরাদ্দ তাতে পড়ুয়াদের খাওয়াতে হিমসিম খান স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার উপর এই দিনের হিসাবে বৈষম্য। প্রতি মাসে নির্ধারিত কার্যদিবস অনুযায়ী মিড-ডে মিলের অর্থ বরাদ্দ করার জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি আমরা।’’ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক সতীশ সাহু বলেন, ‘‘বরাদ্দ বৈষম্যে স্কুলগুলিতে আর্থিক সমস্যা তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে হিসাব নিকাশেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’

পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা মাঝেমধ্যেই অভিযোগ করেন, রোজ খেতে দেওয়া হয় না স্কুলে। সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষকও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘কী করব? মাঝেমধ্যেই মিড-ডে মিল বন্ধ করে দিতে হয়। কখনও বরাদ্দ কাটছাট করে নিতে হয়, হিসাব ঠিক রাখতে।’’ সে কথা বলেছেন অরূপবাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নিরুপায়। অনেক সময়ই শনিবারগুলো মিড-ডে মিল বন্ধ করে হিসাব মেলাতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tamluk Trouble Mid-Day Meal Insufficient Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE