অনিয়ম: অন্যায়ভাবে টাকা আদায় নিয়ে বিজ্ঞপ্তি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে।নিজস্ব চিত্র।
ছবি এক: নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার সময় দেখা হচ্ছে না পরিচয়পত্র। ছুটির পর সদ্যোজাতদের নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন প্রসূতি আর তাঁর আত্মীয়রা। তাঁদের কাছে আদৌ ছুটির কাগজ রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে না। চিকিৎসক থেকে কর্মী বা আয়া-কারও গলাতেই ঝুলছে না পরিচয় পত্র। বুধবার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের ছবি এমনই।
ছবি দুই: শিশুর জন্মের খবর জানার জন্য গুনতে হবে কড়কড়ে টাকা। পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা হাসপাতালে অলিখিত নিয়ম যেন এটাই। মেয়ে হলে আয়াদের হাতে দিতে হবে ন্যুনতম ৩০০ টাকা। আর ছেলে হলে এক ধাক্কায় ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার দক্ষিণা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরি কাণ্ডের পর একদিনের মধ্যেই সামনে এল দুই মেদিনীপুরের সরকারি হাসপাতালের এমনই অব্যবস্থার ছবি। দুই ক্ষেত্রেই অবশ্য অভিযোগ মেনে নিয়েছেন হাসপাতাল সুপাররা।
আরও পড়ুন: ভয় ভেঙে রক্ত দিলেন ছাত্রীরা
সদ্যোজাতকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছুটির কাগজ দেখার বালাই নেই ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা বিরক্তই। তাঁর জবাব, ‘‘ঘাটাল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক। হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষী থাকার পরও কেন নজরদারি ঠিকমতো হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।’’
শিশু চুরি ও বিক্রি নিয়ে মাস খানেক আগেই সরকারি হাসপাতালে নানা নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে নানা বেআইনি কার্যকলাপ। শিশু চুরি রোধ-সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর কী
নির্দেশ দিয়েছিল?
সূত্রের খবর, হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি বাড়ানোর কথা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে রোগীর পরিজনেরা যাতে হাসপাতালে যাতে ঢুকতে না পারেন তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গেটপাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং কর্মীদের পোশাক এবং পরিচয় পত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
ঘাটাল হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “পোশাক নিয়ে সুপার আমাদের নিয়ে কোনও বৈঠকই করেননি। আর প্রসূতি বিভাগে অবাধ যাতায়াতও বন্ধ হয়নি।’’ নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, “সন্ধ্যার পরই প্রসূতি বিভাগ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে মদ খেয়ে এসে অনেকে গালিগালাজ করেন। এসব বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষের কোনও হুঁশ নেই।’’
আর পূর্ব মেদিনীপুরে আয়াদের রমরমা নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে খোদ প্রসূতির পরিবারই।
মঙ্গলবারই জেলা হাসপাতালে এক শিশুর জন্মের পর তার পরিবারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে সুপারের নির্দেশে ওই শিশুর পরিবারের কাছে টাকা ফেরত দেন ওই হাসপাতাল কর্মী। টাকা নেওয়ার অভিযোগে হাসপাতালের ওই কর্মীকে শো-কজ করা হয়েছে।
কিন্তু এই ছোট ছোট পদক্ষেপে হাসপাতালের এত বড় ফাঁক পূরণ হবে তো? প্রশ্ন সকলেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy