চুলের মুঠি ধরে মাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ছেলে। রাস্তায় পড়ে কাঁদতে কাঁদতে মা বারবার বলছেন, ‘তোকে আর কিছু বলব না’। সে কথা অবশ্য কানে উঠছে না ‘গুণধর’ ছেলের। প্রতিবেশীদের প্রতিবাদও কানে তুলছে না সে।
শনিবার ঝাড়গ্রাম শহরের শক্তিনগরে ছেলের হাতে মায়ের নির্যাতনের ভিডিয়ো মোবাইলে তুলে রেখেছিলেন এক প্রতিবেশী। পরে সেই ভিডিয়ো তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক দেখেই ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও তৎপর হয়েছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত ছেলে পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শহরের ওই ঘটনাটি শুনেছি। কড়া ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ছেলের নাম গণেশ পাত্র। আর নির্যাতিতা মা হলেন বছর তেষট্টির পূর্ণিমা পাত্র। একই বাড়িতে আলাদা থাকেন মা-ছেলে। গণেশ স্ত্রীর নাম গীতা পাত্র। গীতা পরিচারিকার কাজ করেন, গণেশ দিনমজুর। কখনও কখনও ঠিকাশ্রমিকের কাজও করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায়ই মদ্যপান করে বাড়িতে আসে গণেশ। প্রতিবাদ করলে মারধর করবে, এই ভয়ে স্ত্রী কিছু বলেন না। তবে পূর্ণিমাদেবী তাকে বকাঝকা করেন। মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে না আসতে বলেন। আর তাতেই মেজাজ হারায় গণেশ। মাকে মারধর শুরু করে।
এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে।
শনিবার দুপুরেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। মানিক দাস নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, “মাঝেমধ্যেই এই ঘটনা ঘটে। গণেশ বৃদ্ধা মাকে নানা ভাবে নির্যাতন করে। চোখের সামনে সব দেখেও কিছু বলতে পারি না। বলতে গেলেই মারধর করবে।” একই বক্তব্য সুরজ দাশগুপ্ত নামে আরেক প্রতিবেশীর। শনিবার দুপুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাড়ির সামনের অনেকটা রাস্তাই বৃদ্ধা মাকে চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় গণেশ। পূর্ণিমাদেবী তখন হাউহাউ করে কাঁদছেন। এক সময়ে গণেশকে প্রতিবেশীরা বলেন, ‘এ সব বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’ গণেশ পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কীসের বাড়াবাড়ি?’
নির্যাতনের ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট হতেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। নড়েচড়ে বসে পুলিশ। গণেশের খোঁজে শনিবার রাতেই শক্তিনগরে আসে পুলিশ। গণেশ অবশ্য বাড়িতে নেই। সে আগেই পালিয়েছে।