Advertisement
০৪ মে ২০২৪

যোগাসনেই বিশ্বজয় করতে চান সন্দীপ

চোখে স্বপ্ন যোগাসনে জগত্‌ জয় করার। জাতীয়স্তরের যোগাসন প্রতিযোগিতায় সদ্য প্রথম হয়েছেন। এরপর আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাবেন। অথচ স্বপ্ন পূরণের প্রধান বাধা অর্থাভাব। তাই ঝাড়গ্রাম শহরের বছর তেইশের সন্দীপ চক্রবর্তীকে প্রতিনিয়ত স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই করতে হয়। এই তরুণ সম্প্রতি (২৫-২৬ এপ্রিল) রাঁচিতে অনুষ্ঠিত ‘১৯ তম অল ইণ্ডিয়া ইন্টার স্কুল অ্যাণ্ড ক্লাব যোগা চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৫’-এর ২১ থেকে অনুর্ধ্ব ৩০ বিভাগে প্রথম হয়েছেন।

বাড়িতে যোগাসন অনুশীলন করছেন সন্দীপ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বাড়িতে যোগাসন অনুশীলন করছেন সন্দীপ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০১:১১
Share: Save:

চোখে স্বপ্ন যোগাসনে জগত্‌ জয় করার। জাতীয়স্তরের যোগাসন প্রতিযোগিতায় সদ্য প্রথম হয়েছেন। এরপর আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাবেন। অথচ স্বপ্ন পূরণের প্রধান বাধা অর্থাভাব। তাই ঝাড়গ্রাম শহরের বছর তেইশের সন্দীপ চক্রবর্তীকে প্রতিনিয়ত স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই করতে হয়। এই তরুণ সম্প্রতি (২৫-২৬ এপ্রিল) রাঁচিতে অনুষ্ঠিত ‘১৯ তম অল ইণ্ডিয়া ইন্টার স্কুল অ্যাণ্ড ক্লাব যোগা চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৫’-এর ২১ থেকে অনুর্ধ্ব ৩০ বিভাগে প্রথম হয়েছেন। অরণ্যশহরের বাছুরডোবার বাসিন্দা সন্দীপ মানিকপাড়ার একটি কলেজে বিএ পাস কোর্সে পড়াশুনোর পাশাপাশি, এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের স্বেচ্ছায় বিনা পারিশ্রমিকে নিজের বাড়িতে যোগাসন শেখান। আর সংসারের জোয়াল টানতে একটি বেসরকারি সংস্থায় যত্‌সামান্য মাসিক বেতনের বিনিময়ে কাজও করেন এই তরুণ। সন্দীপের বক্তব্য, “জানি না, আমার স্বপ্ন কোনও দিন সফল হবে কি-না। সে জন্যই তো স্থানীয় কচিকাঁচাদের মধ্য দিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওদের মধ্যে কেউ যদি ভবিষ্যতে বিশ্বজয় করতে পারে, তাহলে সেটাও তো আমারই জয় হবে।”

অরণ্যশহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাছরডোবায় পিচ রাস্তার ধারে এক চিলতে টিনের ছাদের ইঁটের গাথনির বাড়িতে বাবা, মা, বোন ও ঠাকুরমার সঙ্গে থাকেন সন্দীপ। বাড়ির লাগোয়া একটি পান দোকান চালান তাঁর বাবা অশোক চক্রবর্তী। মা বন্দনা চক্রবর্তী গৃহবধূ। বোন সুদীপা ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ছাত্রী। প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় খুব ছোটবেলায় স্থানীয় ‘জাগ্রত সঙ্ঘ জিমন্যাসিয়াম’-এর দুই প্রশিক্ষক অসিত পাল ও সুকমল চন্দ ওরফে টনদা-র কাছে যোগাসনে হাতিখড়ি হয় সন্দীপের। ২০০০ সালে ঝাড়গ্রাম যুব উত্‌সবে যোগাসনে অনূর্ধ্ব-১২ বিভাগে তৃতীয় হয়ে প্রথমবার ক্রীড়ামহলের নজরে আসেন সন্দীপ। এরপর জেলাস্তরের বিভিন্ন যোগাসন প্রতিযোগিতায় সফল হয়েছেন। রাজ্যস্তরের যোগাসন প্রতিযোগিতাতেও যোগ দিয়েছেন। এবার জাতীয়স্তরের সাফল্যের পরে নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাবেন। সাফল্যের পাশাপাশি, রয়েছে অভাবের যন্ত্রণাও। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরে অর্থাভাবে স্নাতকস্তরে পড়াশুনা করতে পারেন নি। এ বছর অবশ্য স্পোর্টস্‌ কোটায় ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া কলেজে বিএ পাস কোর্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। ঠিকা-কাজের জন্য অবশ্য রোজ কলেজে যাওয়া হয় না।

সন্দীপ বলেন, “বাবার পান দোকানের রোজগারে সংসার চলে না। তাই একটি সংস্থায় কাজ করে নিজের খরচটা চালাই। আর এলাকার ছোটদের স্বেচ্ছায় যোগাসন শেখাই। ওদের হাসিমুখ দেখে নিজের কষ্ট ভুলে থাকি।” প্রতিদিন সকালে বাড়িতে নিয়ম করে যোগাসন অভ্যাস করার পরে কাজে যান সন্দীপ। দুপুর থেকে বিকেল খানিকক্ষণ বিরতি। সেই ফাঁকে বিকেলে নিজে অনুশীলন করেন। সেই সঙ্গে এলাকার ছেলে মেয়েদেরও যোগাসন শেখান। সন্ধ্যে থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত ফের কাজে যেতে হয়। সন্দীপের বাবা অশোকবাবুর কথায়, “২০০৭ সালে রাজ্যস্তরের যোগাসন শিবিরে সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ছেলেকে পাঠাতে পারি নি। গত বছর ডিসেম্বরে হায়দরাবাদে জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতায় ডাক পেয়েও অর্থাভাবে সন্দীপ যেতে পারে নি। সন্দীপ যে সংস্থায় কাজ করে, সেখানকার মালিক অমিতাভ মিশ্র এবার জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগদানের খরচ দিয়েছিলেন।”

নিজের ঘরের মেঝেতে ‘ব্যাঘ্রা’, ‘কুন্ঠি’, ‘ময়ূরা’, ‘কুণ্ডিল্য’র মতো যোগাসনগুলি অনায়াসে করে দেখান সন্দীপ। ততক্ষণে ঘরে ভিড় জমিয়েছে দশম শ্রেণীর রোহিত আচার্য, নবম শ্রেণীর প্রিয়স্মিতা কর, ষষ্ঠ শ্রেণীর সুমিত চক্রবর্তী, প্রথম শ্রেণীর ইপ্সিতা মল্লিকদের মতো এক ঝাঁক উজ্জ্বল মুখ। রোহিত, প্রিয়স্মিতাদের কথায়, “সন্দীপদা আমাদের নিয়মিত যোগাসন শেখান। কিন্তু কোনও পারিশ্রমিক নেন না। যোগাসনের চর্চা করে আমরা ভাল আছি।”

সন্দীপের প্রশিক্ষক সুকমল চন্দ বলেন, “সন্দীপের মধ্যে অসম্ভব সম্ভাবনা রয়েছে। দারিদ্রই ওর প্রধান বাধা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এখনও কোনও স্পনসরও জোগাড় হয় নি। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE