Advertisement
E-Paper

বন্ধ কারখানায় লক্ষ্মী আরাধনা তেলুগু প্রথায়

বন্ধ কারখানার চত্বরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের ছবি টাঙিয়ে পুজো করছিলেন ওঁরা। সকাল থেকেই বটপল্লব, সিঁদুর, ধূপ আর ডাব দিয়ে ঘট সাজিয়ে সৌভাগ্যের দেবীকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন লক্ষ্মী গোড়লা, সরস্বতী চিকলিওয়ালসা, সীতা গো়ড়লারা।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪১
কাজ ফিরে পাওয়ায় প্রার্থনায় লক্ষ্মী পুজো। — সোহম গুহ।

কাজ ফিরে পাওয়ায় প্রার্থনায় লক্ষ্মী পুজো। — সোহম গুহ।

বন্ধ কারখানার চত্বরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের ছবি টাঙিয়ে পুজো করছিলেন ওঁরা। সকাল থেকেই বটপল্লব, সিঁদুর, ধূপ আর ডাব দিয়ে ঘট সাজিয়ে সৌভাগ্যের দেবীকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন লক্ষ্মী গোড়লা, সরস্বতী চিকলিওয়ালসা, সীতা গো়ড়লারা। সন্ধ্যা নামলে কোজাগরী পূর্ণিমার আলোয় তাঁরা শুরু করবেন লক্ষ্মী আরাধনা। সকলেই কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করছিলেন বন্ধ কারখানা যেন আবার খুলে যায়।

কারখানা অবশ্য বন্ধ গত দশ বছর। বকেয়া টাকা আজও পাননি কর্মীরা। লক্ষ্মীদেবীর কৃপাদৃষ্টি বহু দিন আগেই উঠে গিয়েছে দাদনপাত্রবাড়ের বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি থেকে। সেই সঙ্গে সংসার ডুবেছে লক্ষ্মী, সীতা, সরস্বতীদের। একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, গত তিন বছরে সেই প্রকল্পের টাকাও পাননি তাঁরা। তবু লক্ষ্মীপুজো ছাড়েননি।

জন্মসূত্রে এঁরা প্রত্যেকেই অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। চল্লিশের দশকে তাঁদের পূর্বপুরুষরা দাদনপাত্রবাড়ে চলে আসেন লবণ-শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। তারপর থেকে বংশানুক্রমে এখানেই রয়ে গিয়েছেন। তবে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই দেশে ফিরে গিয়েছেন। এখন ছ’টি পরিবারের জনা তিরিশেক মানুষ বেঙ্গল সল্ট কারখানার মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। আশা একদিন ফের খুলবে কারখানা। শনিবার বন্ধ কারখানার ভিতরে একটি বটগাছের নীচে লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন করছিলেন তাঁরা। ঠিক বাঙালি নিয়মে নয়। বরং তেলুগু প্রথা মেনে।

বেঙ্গল সল্ট কারখানার প্রাক্তন সুপারভাইজার মদনমোহন দাস জানালেন, তিরিশের দশকে শিল্পাচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পরামর্শে দাদনপাত্রবাড়ের উপকূলে ১৬০০ একর জমির উপর গড়ে উঠে রাজ্যের বৃহত্তম লবণ কারখানা— বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি। ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধুঁকতে শুরু করে। ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোনও রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও, সুরাহা হয়নি। একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। শ্রমিকদের বকেয়া প্রায় দেড়কোটি টাকা আজও দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে লেবার কমিশনার, রাজ্য শ্রম দফতরকে বারবার জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন কালিন্দী গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান অশোক মাইতি।

তবুও আশা ছাড়েননি স্বরসতী, লক্ষী আর সীতাদেবীরা। নুন কারখানার পরিত্যক্ত এলাকায় সামান্য কিছু নুন তৈরি করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন তাঁরা। আধপেটা খেয়ে বাঁচেন। তবু বিশ্বাস আবার চালু হবে কারখানা, কাজ ফিরে পাবেন তাঁরা। সুখ সমৃদ্ধি ফিরবে অভাবের সংসারে। সেই আশাতেই ভগ্নস্তূপেই
লক্ষ্মী আরাধনা।

Lakshmi puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy