জেলা দফতরে মনোনয়ন জমা ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীদের। —নিজস্ব চিত্র।
সময় বদলেছে।
বামেদের দাপট এখন ম্রিয়মান। পাঁচ বছর আগেও ছবিটা ছিল অন্য। বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় লাল পতাকায় ঢেকে যেত তমলুক। কিন্তু এ বার নীরবেই বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিলেন। প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা গেল না দলের কোনও প্রথম সারির নেতাকে। লাল পতাকা ছাড়াই হাতেগোনা দলীয় কর্মী নিয়ে জেলা প্রশাসনিক অফিসে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন বামফ্রন্টের দুই বড় শরিকদল সিপিএম ও সিপিআই প্রার্থীরা। ওই প্রার্থীদের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর একমাত্র মহিলা সদস্য রীতা দত্ত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, একের পর এক নির্বাচনের হারের মুখ দেখে বিপর্যস্ত বাম শিবির। তারপর আবার পূর্ব মেদিনীপুরে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে সিপিএমের বহিষ্কৃত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বাধীন ভারত নির্মাণ পার্টি। বামেদের অস্বস্তি বাড়িয়ে ইতিমধ্যে তমলুকে একাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছে ভারত নির্মাণ পার্টি। এ দিনই নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্রও জমা দিয়েছেন ভারত নির্মাণ পার্টির এক প্রার্থী।
গত শুক্রবারই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপিও। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই এ দিন মনোনয়ন জমা দিলেন বাম প্রার্থীরা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০টি আসন বিশিষ্ট তমলুক পুরসভায় এ দিন ১১টি আসনে সিপিএম ও শরিক সিপিআই প্রার্থীরা ৩টি আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। একটি আসনে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন বলে জানা গিয়েছে। তমলুকের তিন নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর অভিজিৎ কর ছাড়া অধিকাংশই ওয়ার্ডের প্রার্থী নির্বাচনে নতুন মুখেই ভরসা রেখেছে দল।
প্রশ্ন উঠছে, এমন পরিস্থিতি কেন? সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি অবশ্য বলেন, “প্রকাশ্যে মিছিল করে বা স্লোগান দিয়ে প্রার্থীদের নিয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়নি ঠিকই। কিছুটা কৌশলগত কারণেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর্ব মিটলে এ বিষয়ে জানানো হবে।”
এ দিনই পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভারত নির্মাণ পার্টির পক্ষে নির্দল প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন স্নিগ্ধা মিশ্র। স্নিগ্ধাদেবী তমলুকের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ প্রয়াত সত্যগোপাল মিশ্রের বউমা। এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে স্নিগ্ধা দেবী বলেন, “তমলুক শহরে দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড গড়ার জন্য নির্বাচনে লড়াই করছি। এ জন্য শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেমন প্রচার করব, আবার সিপিএমের বিরুদ্ধেও প্রচার করব। আশা করি, মানুষ আমাদের সমর্থন করবে।” পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক বিজন মিত্র জানান, তমলুক পুরসভায় দলের পক্ষ থেকে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
অন্য দিকে, এ দিন মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেন কাঁথি পুরসভার তৃণমূল প্রার্থীরা। এ দিন কাঁথি পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী, বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী-সহ ২১ জন তৃণমূল প্রার্থী মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। তার আগে সকাল ১১টা নাগাদ দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন শুভেন্দুবাবু। বৈঠকের পর শুভেন্দুবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূল প্রার্থীরা মিছিল করে মহকুমাশাসকের দফতরে যায়।
পুরভোটে তৃণমূলের ফল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ দিন শুভেন্দুবাবু বলেন, “কাঁথি পুরসভা নির্বাচনে উন্নয়নের নিরিখে তৃণমূল প্রার্থীরাই জয়ী হবেন। শহরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই কাঁথির মানুষ তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেবেন।” এখনও পর্যন্ত বিরোধীদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না হওয়া নিয়ে শুভেন্দুবাবুর বক্তব্য, “এটা বিরোধী দলগুলির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হতে পারে। কাঁথি পুর এলাকায় তৃণমূলের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের বিরুদ্ধে মানুষ বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে অস্বীকার করছেন, এমনও হতে পারে।” এগরা পুরসভাতেও প্রার্থী ঘোষণার আগেই মনোনয়ন জমা দিল বামেরা। ৫ নম্বর ওয়ার্ড বাদে ১৩টি ওয়ার্ডে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy