Advertisement
E-Paper

ভয় ভেঙে এগোবে কেশপুর, প্রত্যয়ী সিপিএম

জোনাল কার্যালয় সাজানো হয়েছিল। শনিবার বিকেলে চলছিল কর্মিসভা। সিপিএমকে অনেক দুর্যোগ পেরিয়ে এই কর্মিসভার আয়োজন করতে হয়েছে কেশপুরে— সে কথা সকলেই মানেন। কিন্তু এ দিন যে আকাশেও দুর্যোগের ঘনঘটা। কিন্তু হার মানলেন না বাম নেতারা। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বক্তৃতা করছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। সে সময় ঝড়-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কেশপুরের জামশেদ ভবনের কর্মিসভা।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০২:০৮
জামশেদ ভবনের ভিতরে বক্তব্য রাখছেন দীপক সরকার। (ডান দিকে) পুলিশি প্রহরায় মিছিল কেশপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ

জামশেদ ভবনের ভিতরে বক্তব্য রাখছেন দীপক সরকার। (ডান দিকে) পুলিশি প্রহরায় মিছিল কেশপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ

জোনাল কার্যালয় সাজানো হয়েছিল। শনিবার বিকেলে চলছিল কর্মিসভা। সিপিএমকে অনেক দুর্যোগ পেরিয়ে এই কর্মিসভার আয়োজন করতে হয়েছে কেশপুরে— সে কথা সকলেই মানেন। কিন্তু এ দিন যে আকাশেও দুর্যোগের ঘনঘটা। কিন্তু হার মানলেন না বাম নেতারা।

বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বক্তৃতা করছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। সে সময় ঝড়-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কেশপুরের জামশেদ ভবনের কর্মিসভা। সামাল দিলেন কেশপুরের সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলুই। মাইক্রোফোন হাত নিয়ে জোর গলায় তিনি বললেন, ‘‘এই দুর্যোগ বেশিক্ষণ থাকবে না। দুর্যোগ-বাধা অতিক্রম করেই আমাদের এগোতে হবে।” তখন পাশে বসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার, দলের জোনাল সম্পাদক মানিক সেনগুপ্ত।

কিছুক্ষণ পর ঝড়-বৃষ্টি অবশ্য থামল। ফের শুরু হল কর্মিসভা। আর সেখান থেকেই ভয় ভেঙে এগোনোর ডাক দিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। জামশেদ ভবনের বাইরে তখন অভূতপূর্ব নিরাপত্তা। চারদিক ছেয়েছে পুলিশি উর্দিতে। কর্মিসভার পরে একটি মিছিলও হয় কেশপুরে। সেখানেও ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। নির্বাচনী প্রচারে এটিই সিপিএমের প্রথম মিছিল। গোলমাল এড়াতে মিছিলের সামনে-পিছনে ছিল কড়া পুলিশি প্রহরা। কেশপুর বাজার এলাকা পরিক্রমা করেন নেতারা। বাজার এলাকাতেও প্রতি মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এত নিরাপত্তার প্রশ্নে সিপিএমের এক নেতা বলেন, “আসলে নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারি রয়েছে। এই সময় কিছু হলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই বোধহয় এই তৎপরতা!”

জামশেদ ভবনের সামনে আয়োজিত কর্মিসভায় যোগ দিয়েছিল দলীয় কর্মীরা। মাটিতেই বসেছিলেন তাঁরা। আর টেবিল-চেয়ারের ওপার থেকে নেতারা তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। দীপক সরকার বলেন, ‘‘মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াবেই। এখন আর সন্ত্রাসের বিবরণ দেওয়া নয়। এটা ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।” তরুণবাবু মনে করিয়ে দেন, ‘‘এই কেশপুরের সরুইয়ের মাঠেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন ঘোষণা করেছিলেন, কেশপুরকে সিপিএমের শেষপুর করে ছাড়বেন। পারেননি। মানুষ সিপিএমকে কোনও দিন ছাড়েননি। ২০১১ সালেও মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন, কেশপুরে লালঝান্ডা জেতে। লালঝান্ডা জিতবে।’’ তাঁর দাবি, তাঁরা সব এলাকায় যাবেন। তাতে যদি রক্ত ঝরে তো ঝরুক।

সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, দলের অনেক কর্মী-সমর্থককে সভায় আসতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করেছে শাসক দল। পুলিশের সমালোচনা করে দীপকবাবু বলেন, “ক’দিন আগেই ওরা শাঁকপুরে বোমা-গুলি নিয়ে হামলা করল। নৈরাজ্যের শাসন চলছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। এই তাণ্ডবে পুলিশ- প্রশাসন সব রকম ভাবে সহযোগিতা করছে।” শুধু সিপিএম নয়, নেতারা বলেন, কংগ্রেস ও অন্যরাও আক্রান্ত। উঠে আসে সবংয়ে ছাত্র পরিষদ কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানা খুনের প্রসঙ্গ।

বাদ যায়নি সংখ্যলঘু খোঁচাও। দীপকবাবু বলেন, “তৃণমূল সংখ্যালঘুদের ধোঁকা দিয়েছে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দলমত নির্বিশেষে এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’’

তরুণবাবুর পরামর্শ, “মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ধৈর্য্য রাখতে হবে। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। মানুষের জোট, মানুষের শক্তিই আসল। ধীরে ধীরে এগোতে হবে।”

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এ দিন। শুরুতে ঝড় আর পরে বৃষ্টি নামতেই দীপকবাবু, তরুণবাবুরা জামশেদ ভবনের ভিতরে গিয়ে বসেন। কর্মীদের অনেকেও দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে চলে যান। অনেকে আবার মাটিতে পাতা ত্রিপল তুলে মাথা ঢাকা দেন। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে দেখা মেলে রোদের। এ যেন দলের নিজস্ব ছবি। স্পষ্ট যেন এক বার্তা।

যেখানে সভা শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই ফের সভা শুরু হয়। বক্তব্য রাখতে শুরু করেন তরুণবাবু। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলছিলেন, “ঝড়- ঝাপটার মধ্যেও কিন্তু লালঝান্ডা পতপত করে উড়েছে!” প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশিক্ষণ ছিল না। তাড়াতাড়ি কেটে গিয়েছে। কেশপুরে সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্যোগ কবে কাটে, কবে দল ঘুরে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার!

keshpur left front assembly election 2016 good results
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy