তালা বন্ধ গ্রন্থাগার। চত্বরে জমেছে আগাছা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিকেলে একটু খবরের কাগজে চোখ বোলাবেন, পড়বেন নানা ধরনের বই। পাড়ার মহিলারা বাচ্চাদের নিয়ে আসবেন। ছেলেমেয়েরা যখন খেলবে, মায়েরাও তখন বই পড়তে পারবেন। এই ভাবনাচিন্তা থেকেই মেদিনীপুরের শরৎপল্লি মাঠের পাশে ২০০৭-০৮ সালে তৈরি হয়েছিল গ্রন্থাগার। পার্কের জন্য সামনে কিছুটা জায়গাও রাখা হয়েছিল। পার্ক তো হয়নি উল্টে গ্রন্থাগারও বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। আগাছায় ভরেছে চারদিক। সাপের ভয়ে ও দিক মাড়ান না কেউ। শুধু মাদকাসক্ত কিছু যুবককে সেখানে রাতের অন্ধকারে দেখা যায়।
কেন এমন হল? সদুত্তর এড়িয়ে গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক অনুপ রায় বলেন, “কিছু সমস্যায় গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে রয়েছে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোলার ব্যবস্থা করছি।’’ যে বাম কাউন্সিলরের উদ্যোগে গ্রন্থাগারটি তৈরি হয়েছিল সেই কীর্তি দে বক্সীর আবার বক্তব্য, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যায়। তবে আমরা গ্রন্থাগারটি চালুর চেষ্টা করছি।’’
বর্তমানে অবশ্য শরৎপল্লি এলাকা অর্থাৎ ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের জিতেন্দ্রনাথ দাস। তিনি বর্তমান উপ-পুরপ্রধানও। জিতেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের একটি গ্রন্থাগারের দাবি রয়েছে। বর্তমান কমিটি যদি তা চালাতে অপারগ হয়, তাহলে আমাদের দিতে পারেন। সেখানে আমরা বই, সংবাদপত্রের পাশাপাশি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগও দিয়ে দেব।’’
এলাকার মানুষের গ্রন্থাগারের চাহিদা ছিল বলেই তৎকালীন সিপিএম কাউন্সিলর কীর্তি দে বক্সী স্থানীয়দের নিয়েই একটি কমিটি তৈরি করেন। কমিটির সম্পাদক ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কলেজ পরিদর্শক বিনয় চন্দ। এলাকায় যাত্রার আসর বসিয়ে টাকা তুলে শরৎপল্লি মাঠের পাশে তৈরি করা হয় গ্রন্থাগার। বিনয়বাবু বলেন, ‘‘প্রথমে বেশ কিছু বই দিয়েই শুরু হয়েছিল গ্রন্থাগার। কিন্তু তারপরই আমি একটি কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সম্পাদকের পদ ছেড়ে দিই। তারপর কী ভাবে ওই গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে পড়ে তা আর জানি না।’’
গ্রন্থাগার চত্বরটি এখন ঝোপজঙ্গলে ভরা। ভবনটি অবশ্য এখনও ভাঙেনি। তবে জানালাগুলি আর অক্ষত নেই। এই গ্রন্থাগার চালু হলে, পার্কটি তৈরি হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীতা ভট্টাচার্য যেমন বলেন, ‘‘সারাদিন বাড়ির কাজ নিয়েই থাকি। পাড়ায় একটা গ্রন্থাগার থাকলে সত্যি আমাদের ভাল হয়। যেটা রয়েছে সেটা কেউ কেন চালু করছে না জানি না।’’ স্থানীয় যুবক অমলেশ পাত্রের কথায়, “চাকরির জগতে এখন কঠিন প্রতিযোগিতা। একাধিক সংবাদপত্র কিনে পড়া সম্ভব নয়। পাড়ায় গ্রন্থাগারটা চালু হলে সেই সুযোগ মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy