প্রতীকী চিত্র।
নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলন পর্বে মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন শাসক দলের দু’শোরও বেশি নেতা-কর্মী। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলার খাঁড়া ঝুলে থাকলেও এলাকায় তাঁরা বহাল তবিয়তে ‘দাপিয়ে’ বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের এমন ‘দাগী’ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি এবং সিপিএম। জেলা সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা ওই সব তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নামের তালিকা জেলার পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমারের কাছে তুলে দিয়েছেন।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। যা লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যকর করতে হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
এ দিকে, শাসক দলের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের জামিন খারিজ হওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র ‘চেপে’ যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লোকসভা ভোটের আগে শাসক দলকে ‘সুবিধা’ পাইয়ে দিতে আদালতের জিআরও (জেনারেল রেজিস্টার অফিসার) এমন কাজ করছেন বলে পুলিশ সুপারের কাছে কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, বেশ কিছু মামলায় যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা খারিজ করে উচ্চ আদালত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তার নথি হলদিয়া মহকুমা আদালতের জিআরও-র কাছে চেয়েও মেলেনি। পুলিশ সুপারের কাছে সিপিএমের তরফে যে নথি তুলে দেওয়া হয়েছে সেখানে ১০টি মামলার উল্লেখ রয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮৩ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। যা লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যকর করতে হবে বলে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে।
মূলত, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে নন্দীগ্রাম থানায় ওই সব মামলা হয়েছিল। নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব তৈরির সময় এইসব মামলা করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, খুনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকী পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে একাধিক শাসক দলের নেতার বিরুদ্ধে। সিপিএম এবং পুলিশ সূত্রে সূত্রে খবর, ওই সব মামলায় ২৭৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। হলদিয়ার বাসিন্দা নন্দীগ্রামের এক মামলাকারীর দাবি, অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই হাইকোর্ট কী নির্দেশ দিয়েছে তা জানার জন্য হলদিয়া মহকুমা আদালতে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু জিআরও ওই নথি দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
সিপিএমের অভিযোগ, হলদিয়া মহকুমা আদালতে জিআরও-র দায়িত্বে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন শেখ সরিফুল ইসলাম। শাসক দলকে ‘সহযোগিতা’ করার জন্য তিনি নথি চেপে গিয়েছেন। জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা গত নির্বাচনগুলিতে ভোট লুট করে শাসক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। এবারও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত নথি আড়াল করার চেষ্টা করছে হলদিয়া মহকুমা আদালতের জিআরও। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’’
এমন ঘটনা নিয়ে জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ কুমার দাসও। যদিও সিপিএম এবং বিজেপির অভিযোগ নিয়ে নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পাল বলেন, ‘‘বাম আমলে জমি রক্ষার আন্দোলন চলাকালীন আমাদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করেছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। তাই আইনি পথেই এগোচ্ছি।’’
যাঁর বিরুদ্ধে নথি ‘চেপে’ যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেই জিআরও শেখ সরিফুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করা হলে তারও উত্তর দেননি।
জেলার পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘পুরনো মামলায় যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, সকলের খোঁজেই তল্লাশি চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy