দিঘায় সৌন্দর্যায়ন। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্র ভাঙন সমস্যার সমাধান হবে কবে?
লোকসভা বা বিধানসভা যে কোনও ভোটের আগে রামনগর বিধানসভার উপকূল এলাকায় প্রচারে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হত। গত কয়েক বছরে সমুদ্র ভাঙন সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যে যতটুকু কাজ হয়েছে তা ভাঙন আতঙ্কে থাকা উপকূল এলাকার মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে তা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতেই জানা গেল।
জলধা এলাকার বাসিন্দা গোপাল মাইতি বলেন, “কোটালের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ টপকে বাড়িতে ও ধান জমিতে ও পুকুরে নোনা জল ঢুকতো। সমুদ্র বাঁধ মজবুত না হওয়ায়, আমরা চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু রাজ্যের পরিবেশ ও সেচ দফতর ভাঙন রোধে এগিয়ে আসায় স্বস্তি পেয়েছি।’’ নিউ দিঘার উদয়পুর থেকে একেবারে ওল্ড দিঘার মোহনা, আবার শঙ্করপুর থেকে জামড়া শ্যামপুর এলাকায় সমুদ্র বাঁধের কাজ অনেকটা এগিয়েয়েছে। উদয়পুর থেকে দিঘা মোহনা পর্যন্ত কংক্রিটের সমুদ্র বাঁধের কাজও প্রায় শেষ।
রামনগর বিধানসভা এলাকার রামনগর ১ ও ২ ব্লকের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল এলাকা। যার মধ্যে পড়ছে রাজ্যের অন্যতম চার পর্যটনকেন্দ্র দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি ও তাজপুর। এই চারটি পর্যটনকেন্দ্রকে এক সূত্রে বাঁধতে সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়েই তৈরি হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ। যে রাস্তা দিয়ে পর্যটকরা সমুদ্র দেখতে দেখতেই পৈঁছে যেতে পারবেন এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায়। প্রকল্প চালু হলে উপকূল এলাকার আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি উঠে এসেছে শাসক দলের প্রচারে।
রামনগরে দিঘা-কলকাতা সড়কে অন্যতম সমস্যা ছিল যানজট। দিঘা যাওয়ার পথে রামনগরের পুরাতন সরু সেতুতে দু’টি গাড়ি পাশাপাশি যাতায়াত করতে পারত না। যানজটে নাকাল হতেন স্থানীয় মানুষ থেকে পর্যটকেরা। পুরাতন সেই সংকীর্ণ সেতুর পাশে এখন কংক্রিটের সেতু যানজটের সমস্যা মিটিয়েছে।
এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল পান। পানচাষিদের সুবিধার্থে দু’টি পানবাজারও তৈরি হয়েছে। রাস্তা থেকে পানীয় জল, সেতু নিয়ে রামনগরের মানুষের তেমন ক্ষোভ না থাকলেও আক্ষেপ রয়েছে তাজপুর বন্দর নিয়ে। তাজপুরে সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় আশার আলো দেখছে রামনগর। বন্দর হলে এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থানে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। কিন্তু পরবর্তীতে তাজপুরে বন্দর নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের চাপানউতোরে সেই আশা নিয়ে সংশয়ে এখানকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর মাইতির কথায়, ‘‘কেন্দ্র না রাজ্য, তাজপুরে বন্দর কোন সরকার করবে, সে সব আমরা বিশেষ বুঝি না। কিন্তু তাজপুরে বন্দর হোক এটা আমরা চাই।’’
রামনগর বিধানসভা এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চায়েত সমিতি রামনগর-১। ২০১৩-১৪ সালে উন্নয়নের নিরিখে এই পঞ্চায়েত সমিতি ভারতের অন্যতম সেরা পঞ্চায়েত সমিতি হয়েছিল। তবে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রামনগরে জেলার মধ্যে বিজেপি তুলনামূলকভাবে ভাল ফল করেছে। রামনগরের দুটো পঞ্চায়েত সমিতির ১৭টি অঞ্চলের মধ্যে ১৬টিই এখন তৃণমূলের দখলে। একটি অঞ্চল (তালগাছাড়ি-১) বিজেপি, সিপিএম ও নির্দল মিলে গঠন করেছে। এটাকে অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ এই রামনগর বিধানসভা এলাকায় বহু উন্নয়ন করেছে। আর সেই পর্ষদের সভাপতি হলেন শিশির অধিকারী। তাই পর্ষদের উন্নয়নের ফসল শিশিরবাবু নির্বাচনে তুলতে পারবেন। রামনগরের তৃণমূল নেতা নিতাই সার বলেন, “গত বারের চেয়েও এবার রামনগরে ভাল ফল করবে তৃণমূল।’’
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন মাইতি বলেন, “এর আগে এলাকার যতগুলি সমবায় সমিতির ভোট হয়েছে, সবগুলিতেই তৃণমূলের তুলনায় বিজেপি ভাল ফল করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও রামনগরে দলের ফল ভাল। তাই রামনগর বিধানসভা এবার বিজেপিকে লিড দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy