গাফিলতি: মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই লাগিয়ে রাখা হয়েছে রোস্তোরাঁয়। —নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার পাশে ঘুপচি রেস্তোরাঁ। কোনওটা পাঁচ ফুট বাই সাত ফুটের। কোনওটা আরও কম! সেই ঘুপচি রেস্তোরাঁর সামনেই দিব্যি গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে রান্নার কাজ চলছে। অগ্নি নির্বাপণ বিধি মানার বালাই নেই। আগুন লাগলে পরিণাম যে কী ভয়াবহ হতে পারে, তা অবশ্য জানা নেই কারও। জেলার সদর শহর মেদিনীপুর হোক বা পাশের শহর খড়্গপুর ছবিটা কমবেশি একই।
মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়া, রাঙামাটি, অশোকনগর, বটতলাচক, ভীমচক, জুগনুতলা এলাকায় চোখে পড়বে একের পর এক রেস্তোরাঁ। অভিযোগ, এর মধ্যে অধিকাংশ রেস্তোরাঁতেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। বিপজ্জনকভাবে ঘুপচি রেস্তোরাঁয় গার্হস্থ্য সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না চলে বলে অভিযোগ। মেদিনীপুরের এক পুরকর্তাও মানছেন, “শুনেছি, বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় গার্হস্থ্য (ডোমেস্টিক) সিলিন্ডার বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা হয়। দমকলের লাইসেন্সও নেই। এ বার নজরদারি শুরু হবে। বেআইনি ভাবে রেস্তোরাঁ চললে উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।” এক দমকল কর্তারও স্বীকারোক্তি, ‘‘অসাবধানতায় কিছু ঘটনা ঘটে গেলে বিপদের শেষ থাকবে না। তাই সতর্ক হতে হবে।”
খড়্গপুরে পুরীগেটের কাছের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়েও দেখা গেল একটি মাত্র অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। স্টোর রুমে আর একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে ওই রেস্তোরাঁর ম্যানেজার প্রবীন রাও বলেন, “আমার বিষয়টি ঠিক জানা নেই। আমাদের ‘ফায়ার সেফটি লাইসেন্স’ দেখতে হবে।” অন্য রেস্তোরাঁগুলির অধিকাংশও অবশ্য অগ্নিবিধি না মেনেই চলছে রমরমিয়ে। খড়্গপুরের কৌশল্যার একটি নামী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁতেও চোখে পড়ল না অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। অগ্নি নির্বাপণ বিধি মেনে চলার প্রসঙ্গ তুলতেই ওই রেস্তোরাঁর ম্যানেজার অশোক চৌধুরীর চটজলদি জবাব, “অন্য জায়গায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা আছে। আপনাকে দেখাতে পারব না।” রেলশহরের অন্য রেস্তোরাঁগুলির ছবিও কমবেশি একই।
দমকল বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি হোটেল, রেস্তোরাঁয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। খড়্গপুর দমকল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ওসি রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “বছর চারেক আগে একবার শহরের প্রায় ৪০টি রেস্তোরাঁয় অগ্নিনির্বাপণ বিধি নেই বলে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেও ওই রেস্তোরাঁগুলি সচেতন হয়নি।” দমকলের ওসি (মেদিনীপুর) মানিকলাল দোলুইয়ের কথায়, “বিষয়টি এ বার গুরুত্ব দিয়েই দেখা হবে। যে কোনও সময় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। খোলা জায়গায় এ ভাবে রান্না করা কখনওই উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হবে।”
পরিস্থিতি দেখে নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে পুরসভাও। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের কথায়, “শহরে রাস্তার পাশে এমন বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। সব রেস্তোরাঁয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও নেই। বিষয়টি দেখছি।গাফিলতি থাকলে রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy