চলছে বাতের চিকিৎসা। — নিজস্ব চিত্র।
গেঁটে বাতে ভুগে ভুগে পাড়ার পিসিমা সেই কবে থেকে শয্যাশায়ী, কোমরে, ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে ঘরবন্দি ছোটদাদু। চিকিৎসা বলতে সেই তেল মালিশ কিংবা হরেক কিসিমের টোটকা। এমন একটা ধারণাই প্রবল বাত সম্পর্কে। সারা রাজ্যে একমাত্র কলকাতার এসএসকেএম-এ রয়েছে রিউম্যাটোলজি বিভাগ, যেখানে শুধু বাতের চিকিৎসা হয়।
এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সম্প্রতি সেখানে শুরু হয়েছে বাতের চিকিৎসা। আপাতত ১৫ জন রোগীর চিকিৎসা চলছে সেখানে। কিন্তু তা হাসপাতালের চিকিৎসক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত এবং স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র শিঞ্জন পাত্রের নিজস্ব উদ্যোগে। তাঁরা একটি ক্লিনিক খোলার বিষয়েও উদ্যোগী হয়েছেন। সে বিষয়ে হাসপাতালের অনুমতিও মিলেছে বলে জানা গিয়েছে।
হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “বাতের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ফলে আগে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হত না। কিন্তু এখন কারও থেরাপি প্রয়োজন হলেই সরকার সে টাকা দিচ্ছে। তাই আমরাও ক্লিনিক খোলার জন্য চিকিৎসকদের উৎসাহিত করছি।”
মেদিনীপুর মে়ডিক্যালে ‘রিউম্যাটোলজি ক্লিনিক’ চালু করার বিষয়ে উৎসাহী কৃপাসিন্ধুবাবু। তিনি বলেন বলেন, ‘‘অনেক সময় শুধু সাধারণ ওষুধে কাজ হয় না। তখনই ‘থেরাপি’তে যেতে হয়। তাতেও কাজ না হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।’’ এ বিষয়ে মেডিক্যালের অস্থি বিশেষজ্ঞ কুলদীপ মুখোপাধ্যায় ও শিশু চিকিৎসক তারাপদ ঘোষের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে মেডিক্যালে সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি পাঁচ জন রোগীর থেরাপিও চলছে। অগস্ট মাস থেকেই পুরোদমে আলাদা ক্লিনিক চালু হয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন কৃপাসিন্ধুবাবু। শিশু ও বয়স্কদের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে দুই বিভাগের চিকিৎসকেরাও থাকবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী যে কোনও রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৩০ শতাংশের গাঁটের ব্যথা থাকে। সে সবই যে খুব গুরুতর, তেমন নয়। তবে ওই ৩০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগীর গাঁটের ব্যথার চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। রোগ গুরুতর হলে দু’ধরনের থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। এর মধ্যে সব থেকে ব্যয়বহুল হল ইনফ্লিক্সিম্যাব। খরচ প্রায় ৭-৮ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয়টি হল রিটুক্সিম্যাব। তাতেও খরচ প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই চিকিৎসা অসম্ভব। কৃপাসিন্ধুবাবু বলেন, “এখন সরকার নিখরচাতেই এই সব ইঞ্জেকশন দিচ্ছে। তাই আমরাও উদ্যোগী হয়েছি।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসা করাচ্ছেন খড়্গপুর-১ ব্লকের বলরামপুরের বাসিন্দা শেখ সাদেক আলি। পেশায় দর্জি শেখ সাদেক আলিকে পা দিয়ে মেশিন চালাতে হয়। পারেন না। এমনকী প্রচুর খরচ হয়েছে চিকিৎসায়। তাঁর কথায়, “গত ৫-৬ বছর ধরে চারদিকে গিয়েছি। এত খরচ করে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এখানে চিকিৎসা শুরু না হলে কোনও দিনই সুস্থ হতে পারতাম না।”
মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা সুলেখা দাসের অবস্থাও একই। সারা শরীরে যন্ত্রণা। সে যন্ত্রণা অনেকটাই কমেছে চিকিৎসা করিয়ে। কিন্তু ডান পায়ের গাঁটের ব্যথা কমেনি। কৃপাসিন্ধুবাবুর কথায়, “ওঁর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। আলাদাভাবে ক্লিনিকটি চালু হলেই অস্ত্রোপচার করব।” বাতের ব্যথার জন্য মেডিক্যাল কলেজে আলাদা ক্লিনিক হওয়ার খবরে খুশি সকলেই। দীর্ঘদিনের বাতের রোগী মেদিনীপুরের শিপ্রা পাল বলেন, “বাইরে চিকিৎসা করাচ্ছি। খরচে পোষাতে পারছি না। এ বার নিখরচায় চিকিৎসা পেলে ভীষণ উপকৃত হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy