পার্থপ্রতিম দাস।
রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের ছুটি নেওয়া বা বদলির উদাহরণ হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু এর সম্পূর্ণ উল্টো ছবি দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। মাসিক মাত্র এক টাকার পারিশ্রমিকে চিকিৎসায় সাহায্য করার জন্য নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যোগ দিলেন জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পদে থাকা চিকিৎসক পার্থপ্রতিম দাস।
আদতে খেজুরির বাসিন্দা পার্থবাবু নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন ১৯৯৬ সালে। ২০০০ সালে খেজুরির জনকা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০২ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। এর পরেও তিনি একাধিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দিয়েছিলেন।
২০১৩ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচিত হন পার্থবাবু। চাকরি ছেড়ে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তিনি তৃণমূলের হয়ে ফের জয়ী হয়েছেন। রাজনীতি ও স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সাথে পার্থবাবু গত বছরের মাঝামাঝি বিনা পারিশ্রমিকে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যোগ দেওয়ার জন্য আর্জি জানান নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ নিয়ে প্রশাসনিকভাবে নিয়ম না থাকায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর পার্থের আবেদন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের জানায়। এর পরেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর গত এপ্রিলে নির্দেশিকা জারি করে জানায়, জনপ্রতিনিধি হিসাবে থাকা চিকিৎসকেরা স্বেচ্ছায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত হতে চাইলে জেলা স্বাস্থ্য সমিতির সঙ্গে নির্দিষ্ট চুক্তি করে কাজে যোগ দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: অন্যেরা পারছে, তবু প্লাস্টিক বন্ধে পা ফেলতে কুণ্ঠা বাংলার
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওই নির্দেশিকা মেনে জেলা স্বাস্থ্য সমিতি পার্থবাবুর সঙ্গে চুক্তি করে। গত ১ অগস্ট থেকে মাসিক এক টাকার বিনিময়ে এক বছরের জন্য নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অ্যানাস্থেসিস্ট হিসাবে যোগ দিয়েছেন।
কিন্তু নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালই কেন? জবাবে, পার্থবাবু বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকায় ওই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চালুর সময় থেকেই চিকিৎসকের সমস্যা দেখেছি। খেজুরির বাসিন্দারাও ওখানে চিকিৎসার জন্য যান। তাই ওখানে কাজে যোগ দিতে চেয়েছিলাম।’’ হাসপাতালের সুপার আদিত্য কুদি বলেন, ‘‘হাসপাতালে চারজন অ্যানাস্থেসিস্ট প্রয়োজন। ছিল মাত্র একজন। পার্থবাবু যোগ দেওয়ায় প্রসূতিদের সিজার-সহ অন্য রোগীদের অস্ত্রোপচারে সুবিধা হয়েছে।’’
রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়োগ এই প্রথম বলেই দাবি করেছেন নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার এক পদস্থ কর্তা। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের আশা, যে চিকিৎসকেরা জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন, পার্থবাবুকে দেখে তাঁরাও এগিয়ে আসবেন।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুষার আচার্য বলেন, ‘‘পার্থবাবু জনপ্রতিনিধি ছাড়াও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। নন্দীগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে উনি স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে চাইছিলেন। সেই সুযোগ দিতে পেরে আমারও খুশি হয়েছি। আশা করছি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ভাল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy