E-Paper

উন্নয়নের টাকা পড়ে কেন? প্রশ্ন

পঞ্চায়েতস্তরে অবশ্য উন্নয়নের অনেক টাকাই পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া টাকা খরচ করে ওঠা যায়নি। উন্নয়নের টাকা কেন পড়ে থাকছে, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে নতুন করে সেই প্রশ্ন ফের উঠছে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩ ০৮:১০
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

কেন্দ্র সরকার টাকা দিচ্ছে না, বঞ্চনা করছে, মিথ্যা কথা বলছে- তৃণমূলের এমন অভিযোগ নতুন নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুনিয়েছেন, ‘‘বিজেপির নেতারা গিয়ে বলছে (দিল্লিতে), রাস্তায় টাকা দিও না, জলে টাকা দিও না, বাড়িতে টাকা দিও না, একশো দিনের কাজে টাকা দিও না। তাহলে মানুষ উপকৃত হবে। আমরা (বিজেপি নেতারা) কী করে ভোট চাইব। আমি বলি, তোমাদের লজ্জা থাকা উচিত, তার কারণ এগুলো মানুষের টাকা। তোমাদের টাকা নয়।’’ মমতা আরও শুনিয়েছেন, ‘‘জনগণের ট্যাক্স নিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যায়। আগে রাজ্য সরকার ট্যাক্স কালেকশন করত। এখন রাজ্য করে না। জিএসটি হয়ে যাওয়ার ফলে একটা কাপড় কিনতে গেলেও দেখবেন, জিএসটি ট্যাক্স কেটে নেয়। কেন্দ্রীয় সরকার টাকাটা পায়। টাকাটা পেয়ে আমাদের রাজ্যের যে ভাগ, সেই ভাগটা পর্যন্ত দেয় না।’’

পঞ্চায়েতস্তরে অবশ্য উন্নয়নের অনেক টাকাই পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া টাকা খরচ করে ওঠা যায়নি। উন্নয়নের টাকা কেন পড়ে থাকছে, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে নতুন করে সেই প্রশ্ন ফের উঠছে। প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল বরাদ্দ পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে বরাদ্দের অনেকটা পড়ে রয়েছে। খরচ হয়নি। জেলায় ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২১টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। টাকা খরচে অনেকই পিছিয়ে রয়েছে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি। ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪০ শতাংশের বেশি টাকা পড়ে রয়েছে। ওই পঞ্চায়েতগুলি হল কেশিয়াড়ির নছিপুর এবং বাঘাস্তি, গড়বেতা- ২ এর মাকলি, পিংলার ক্ষীরাই, দাঁতন- ১ এর আলিকোসা, কেশপুরের কলাগ্রাম এবং নারায়ণগড়ের মকরামপুর। ৪টি পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪০ শতাংশের বেশি টাকা পড়ে রয়েছে। ওই সমিতিগুলি হল পিংলা, কেশিয়াড়ি, ঘাটাল এবং শালবনি। সময়ে কাজ হচ্ছে না। পরিস্থিতি দেখে টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাতে কাজে গতি আসে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে খরচের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ৮ লক্ষ টাকা। জেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে প্রতি সপ্তাহে খরচ হবে ১০ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। পঞ্চায়েত সমিতিস্তরে প্রতি সপ্তাহে খরচ হবে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি, এই দুই স্তর মিলিয়ে প্রতি সপ্তাহে খরচ হবে ১২ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা।

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের জেলার জন্য মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পায় গ্রাম পঞ্চায়েত। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ করে পায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। বরাদ্দের ৬০ শতাংশ টাকায় (টায়েড ফান্ড) স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্প, শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জল প্রকল্প, বৃষ্টির জল ধরে রাখার মতো প্রকল্প করা যেতে পারে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকায় (আনটায়েড ফান্ড) স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয় পরিকাঠামো গড়া যেতে পারে। পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরকেই সেই মতো কাজের পরিকল্পনা করার কথা জানানো হয়েছিল। ত্রিস্তরের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে সবচেয়ে পিছিয়ে জেলা পরিষদ। বাকি দুই স্তরে কাজের গতিও অবশ্য সন্তোষজনক নয়। গত তিনটি আর্থিক বছরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির জন্য বরাদ্দ হয়েছে সবমিলিয়ে প্রায় ৪৬৮ কোটি ৩৪ লক্ষ ২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২০২০- ’২১ এ ১৯০ কোটি ১৮ লক্ষ ৮৬ হাজার, ২০২১- ’২২ এ ১৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ৮৯ হাজার, ২০২২- ’২৩ এ ১৪০ কোটি ৬৪ লক্ষ ২৫ হাজার। এরমধ্যে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫২ কোটি ৭০ লক্ষ ২১ হাজার। শতাংশের নিরিখে প্রায় ৭৬ শতাংশ। পঞ্চায়েত সমিতিগুলির জন্য বরাদ্দ হয়েছে সবমিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি ৪৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। ২০২০- ’২১ এ ৪০ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮৬ হাজার, ২০২১- ’২২ এ ২৯ কোটি ৪৮ লক্ষ ৫৮ হাজার, ২০২২- ’২৩ এ ৩০ কোটি ২০ লক্ষ ২ হাজার। এরমধ্যে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ৬৪ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৩ হাজার। শতাংশের নিরিখে যা প্রায় ৬৪ শতাংশ।

কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও। বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘কেন্দ্র কোটি কোটি টাকা পাঠাচ্ছে। উন্নয়নে মনই নেই তৃণমূল সরকারের!’’ জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতির অবশ্য দাবি, ‘‘আগের থেকে কাজে গতি এসেছে। জেলার উন্নয়ন স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গেই এগিয়েছে।’’ চলতি আর্থিক বছরের প্রথম দু’মাসে জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত সমিতিস্তরে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘প্রতিনিয়ত নজরদারি চলছে।’’ (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB panchayat Election 2023 midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy