Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কার ব্যাটন কার হাতে 

২০০০ সাল। কেশপুরে তখন সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে গ্রাম দখলের ‘যুদ্ধ’ চলছে। একই দিনে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের ৫ কর্মী। ছুটে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়নাতদন্তের পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে ওই ৫ কর্মীর দেহ নিয়ে তিনি পৌঁছেছিলেন সরুইয়ের মাঠে। সঙ্গে ছিলেন মহম্মদ রফিক। 

বক্তা যখন রফিক। নিজস্ব চিত্র

বক্তা যখন রফিক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেশপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০০:১৩
Share: Save:

বছর ১৯ পর!

সেই কেশপুর, সেই সরুই, সেই রফিক। সেদিন সামনে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সামনে থাকলেন শুভেন্দু অধিকারী।

২০০০ সাল। কেশপুরে তখন সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে গ্রাম দখলের ‘যুদ্ধ’ চলছে। একই দিনে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের ৫ কর্মী। ছুটে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়নাতদন্তের পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে ওই ৫ কর্মীর দেহ নিয়ে তিনি পৌঁছেছিলেন সরুইয়ের মাঠে। সঙ্গে ছিলেন মহম্মদ রফিক।

২০১৯ সাল। রবিবার সেই সরুইয়ের মাঠ থেকে পদযাত্রা শুরু করলেন শুভেন্দু সঙ্গে সেই রফিক।

রফিককে পাশে নিয়ে পদযাত্রা শেষে দলের কর্মী- সমর্থকদের উদ্দেশে শুভেন্দুকে বলতে শোনা গেল, ‘‘এত হতাশ হচ্ছেন কেন? কেশপুরই তো ঘাটাল লোকসভা জিতিয়েছে (৯২ হাজার লিড দিয়েছে)। ভয় পাবেন না। লড়াই হবে। আমি নন্দীগ্রামে সিপিএমকে সোজা করেছি। আমি লালগড়ে সোজা করেছি। এখানেও যদি আপনাদের মাথায় ডান্ডা পড়ে, আপনারা ঘরছাড়া হন, আমরা আছি, থাকব। বিশ্বজিৎকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল (দলের সাহসপুর অঞ্চল সভাপতি বিশ্বজিৎ বরদোলুই)। আমরা এক ঘণ্টার মধ্যে মুক্ত করিয়েছি।’’ শুভেন্দুর ঘোষণা, ‘‘লড়াই হবে। এই লড়াইয়ে আমরা জিতব। জিতবই।’’

পদযাত্রার শুরু থেকে শেষ, সভার শুরু থেকে শেষ, মাইক্রোফোন ছিল রফিকের হাতেই। শুভেন্দু বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেশপুর ‘পুনরুদ্ধারে’ রফিকই তাঁর ঘুঁটি। রফিককে সামনে রেখেই এখানে দল এগোবে। সভা শেষে শুভেন্দুকে ‘ঘিরে’ ধরেন দলের কর্মীরা। স্লোগান ওঠে, ‘আমরা রফিককে চাই।’ দলের কর্মীদের আশ্বস্ত করে রফিককে বলতে শোনা যায়, ‘‘সভা শেষ হয়ে গিয়েছে। আস্তে আস্তে যে যাঁর বাড়ি যান। আপনারা বাড়ি ফিরলে তবে শুভেন্দু অধিকারী কেশপুর ছাড়বেন। আমি আছি। আমাকে শুভেন্দু দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আছি।’’ রফিককে ‘কেশপুরের ভূমিপুত্র’ বলে সম্বোধন করেন শুভেন্দু।

কয়েক দিন আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠক করেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, পুলিশের উপর নির্ভরতা কমাতে। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে যে ভাবে পুলিশ- প্রশাসনের সাহায্য ছাড়াই জেলায় তৃণমূল নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছিল, এখনও সেই ভাবেই বিজেপির মোকাবিলায় ঝাঁপানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। এদিন শুভেন্দুও একই বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল ভবনের ওই বৈঠকে তো নেত্রী রফিককে তাড়াহুড়ো করতেও না বলেছিলেন? দিনের শেষে রফিক বলছেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল যা বলছে, তাই করছি।’’ এ দিন পদযাত্রা শুরুর আগে টোটোর মাথায় বাঁধা মাইকে রফিককে বারেবারে ঘোষণা করতে শোনা গিয়েছে, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশ, মিছিল যাওয়ার সময়ে আপনারা কারও (অন্য দলের) পতাকায় হাত দেবেন না।’’

এ দিন বিকেলে শুরুতে সরুই থেকে কেশপুর বাজার পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় পদযাত্রা করেন শুভেন্দু। পরে কেশপুর বাসস্ট্যান্ডে এক সভা করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই বাসস্ট্যান্ড আমার অতিপরিচিত জায়গা। ২০১১ সালের ২১ জুলাইয়ের প্রাক্কালে এখানে সভা করেছিলাম। আজকে আবার বেশ কয়েক বছর পরে, নতুন পরিস্থিতি, নতুন পরিবেশ, নতুন চক্রান্ত, নতুন হানাদারদের হানার পরে এই জায়গায় সভা করে বলে যাচ্ছি, দুর্বৃত্ত তুমি সাবধান। কেশপুরের মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নেব আমরা।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘সবার সঙ্গে হেঁটে শুভেন্দু জানান দিলেন, বিজেপি যদি একটা তৃণমূলকে আঘাত করে, তার জন্য শুভেন্দু আছেন।’’ কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহার কথায়, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী কে, কী তাঁর পরিচয়, আপনারা সবাই জানেন। আর আমি তো নন্দীগ্রামের মেয়ে, তাই তাঁকে আরও ভাল করে চিনি। উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র বিশ্বস্ত সৈনিক। আমাদের এই সাময়িক বিপর্যয় মোকাবিলার করার দায়িত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীকেই দিয়েছেন।’’

সভা শেষে রফিক বলছিলেন, ‘‘শুভেন্দু বিজেপির ত্রাস। আর তৃণমূলের ত্রাতা।’’ মাইকে তখন তৃণমূলের নির্বাচনী ‘থিম সং’ শোনা যাচ্ছিল, ‘আরও আরও ভাল দিন আসছে...।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Suvendu Adhikari Mohammed Rafique Keshpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE