দাসপুর ব্লক হাসপাতালের পাওয়ার কন্ট্রোল রুমে নেই কোনও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (বাঁ দিকে) দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে অসুরক্ষিত অবস্থায় সুইচ বোর্ড (ডান দিকে)। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
আমরি কাণ্ডের পর আগুন বিধি চালু হয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। কিন্তু সেই নিয়মের মধ্যেও যে একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে বহরমপুর সরকারি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে। সেই দুর্ঘটনায় মাসুল গুনেছিল বেশ কয়েকটি প্রাণ। শুধু তাই কেন, সোমবারও আগুন লাগে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। সরকারি হাসপাতালে আগুন নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে এই একই অভিযোগ উঠেছে। ঘাটাল, দাসপুরের বহু হাসপাতাল নার্সিংহোম ঘুরে চোখ পড়ল এমনই অব্যবস্থার নানা ছবি।
দমকলের আইন বলছে, প্রতিটি নার্সিংহোম বা হাসপাতালে থাকতে হবে প্রশস্ত সিঁড়ি। এছাড়াও নার্সিংহোমগুলির নীচে এবং ছাদে জলের রিজার্ভার, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে দমকল সহজে কাজ করতে পারে-তার জন্য প্রতিটি দেওয়ালে জলের পাইপ লাইনের ব্যবস্থা, প্রতিটি লনে (শয্যা অনুপাতে) অগ্নি নিবার্পক যন্ত্র লাগানোর নির্দেশ রয়েছে। বিকল্প দরজা বসানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অথচ ঘাটাল শহর ঘুরে দেখা গেল, একটি-দু’টি করে অগ্নি নিবার্পক যন্ত্র বসিয়েই দায় সেরে ফেলছে অধিকাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
তবে শুধু বেসরকারি হাসপাতালই বা কেন, সরকারি হাসপাতালগুলিরও একই দশা। দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। সুইচ বোর্ডও অরক্ষিত। অথচ, ৩০ শয্যার এই হাসপাতালে গোটা দাসপুর ব্লকের লক্ষাধিক মানুষ নির্ভশীল। শুধু দাসপুর নয়, ক্ষীরপাই, সোনাখালি-সহ জেলার একাধিক গ্রামীণ হাসপাতালেরও একই হাল। চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে একাধিক অগ্নি নিবার্পক যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু সেগুলি ব্যবহার কী ভাবে করতে হয়-তা জানেন না কর্মীরা। হাসপাতাল সুপার গোপাল দে বলেই ফেললেন, “অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও ব্যবহার হয়নি। প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
সূত্রের খবর, হাসপাতাল বা বড় নার্সিংহোমগুলিতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও নেই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। পাইপও নেই। অভিযোগ, দমকল ও স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনের অভাবেই এমন দশা। সমস্যার কথা মানছেন দমকলের এক পদস্থ আধিকারিকও। তাঁর কথায়, “আমাদেরও কর্মীর অভাব। নজরদারি ঠিকঠাক করা হয়নি। তাই যা ঘটার তাই ঘটছে।” যদিও ঘাটাল দমকল কেন্দ্রের ওসি রবীন্দ্রনাথ বেরা বলেন, “আমরা নজরদারি চালাণ। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “এ সবই কথার কথা। টাকা দিলেই মিলেছে নার্সিংহোম চালানোর সম্মতি। লাইসেন্স নবীকরণও হয়ে যাচ্ছে।’’ যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের সভাপতি সুব্রত রায় বলেন, “আমাদের সব নার্সিংহোমই এখন দমকলের নিয়ম মানা হচ্ছে। পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাও আছে। তবে যে ফাঁক রয়ে গিয়েছে, সেই বিষয়ে দ্রুত আলোচনায় বসা হবে।’’
সোমবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে আগুন লাগার কারণ হিসেবে দমকল কর্মীদের প্রাথমিক ধারণা, তিনতলায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে ডাঁই করে রাখা আবর্জনার স্তূপ। তবে বিষয়টি তড়িঘড়ি নজরে আসায় অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়ানো গিয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে আগুন লাগে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের দোতলায় লাইব্রেরি লাগোয়া ফল্স সিলিং থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখায় যায়। তবে, সঙ্গে সঙ্গে তা নজরে আসায় বড়সড় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু, মূল ব্যবস্থার বদল না করে এভাবে বিপদ আদৌ এড়ানো যাবে তো? উত্তর দেবে সময়ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy