Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সামনেও কঠিন লড়াই, প্রস্তত গার্গী, ছোটোরা

গড়বেতার আমলাগোড়ায় বাড়ি পিয়ালি দে-র। বাবা রাজেশ্বর দে সব্জি বিক্রি করেন। মা মিতা দে গৃহবধূ। অভাবের সংসারে হাসি ফুটিয়েছে মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। পিয়ালি এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪১ নম্বর পেয়েছে। এই কৃতী ছাত্রীর কথায়, “আমাদের কষ্টের সংসার। বাবা কষ্ট করেই এতদূর পড়িয়েছেন।

 গার্গী তালধি, পিয়ালি দে, ছোটো সরেন এবং পাপিয়া পান

গার্গী তালধি, পিয়ালি দে, ছোটো সরেন এবং পাপিয়া পান

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

অভাব নিত্যসঙ্গী। অবশ্য তা দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য জেদকে। বড় কিছু হওয়ার রঙিন স্বপ্ন নয়। ওঁদের ইচ্ছে, পড়াশোনা করার পরে একটা ভাল চাকরি। পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফোটানো। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল সেই আশা জাগিয়েছে ছোটো সরেন, গার্গী তালধি, পিয়ালি দে, পাপিয়া পানদের মনে।

গার্গী তালধির বাড়ি কেশিয়াড়ির আলাসে। বাবা ফনিভূষণ তালধি এক দোকানে কাজ করেন। সামান্য আয়। সেই দিয়েই সংসার চলে। মা সুষমা তালধি গৃহবধূ। উচ্চ মাধ্যমিকের দু’মাস আগে ক্যানসার ধরা পড়ে ফনিভূষণবাবুর। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে গার্গীর। পরীক্ষাটা দেওয়া হবে তো, অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরে তাঁকে। অবশ্য হাল ছাড়েননি বেলদা গঙ্গাধর একাডেমির এই কৃতী ছাত্রী। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৭৩ নম্বর পেয়েছেন তিনি। শিক্ষিকা হতে চান তিনি। গার্গী বলছিলেন, “পরীক্ষার দু’মাস আগে বাবার ক্যানসার ধরা পড়ায় খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি হাল ছাড়িনি।”

গড়বেতার আমলাগোড়ায় বাড়ি পিয়ালি দে-র। বাবা রাজেশ্বর দে সব্জি বিক্রি করেন। মা মিতা দে গৃহবধূ। অভাবের সংসারে হাসি ফুটিয়েছে মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। পিয়ালি এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪১ নম্বর পেয়েছে। এই কৃতী ছাত্রীর কথায়, “আমাদের কষ্টের সংসার। বাবা কষ্ট করেই এতদূর পড়িয়েছেন। বাবা মনে হয় আর পড়াতে পারবেন না।” তাঁর সংযোজন, “তবে আমার তো পড়ার খুব ইচ্ছে রয়েছে। বাবা- মা কে সেই কথা বলেওছি। নার্সিংয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। দেখি কী হয়।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে পিয়ালীর। রাজেশ্বরবাবু বলছিলেন, “মেয়ের তো আরও পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। জানি না মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে পারব কি না।” গড়বেতার ব্যানার্জ্জীডাঙা হাইস্কুলের ছাত্রী পিয়ালি বলছিলেন, “অনেকে সহযোগিতা করেছেন বলেই পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পেরেছি। স্কুলের কথা তো আলাদা ভাবে বলতেই হবে। সব সময়ে স্কুল থেকে সহযোগিতা পেয়েছি।”

ছোটো সরেনের বাড়ি মেদিনীপুর গ্রামীণের শিরোমণিতে। শালবনির ভাদুতলা হাইস্কুলের ছাত্র ছোটো উচ্চ মাধ্যমিকে ৪১৬ নম্বর পেয়েছে। বাবা শম্ভু সরেন দিনমজুর। কাজ মিললে হাতে কিছু টাকা পান। না- হলে নয়। মা মঙ্গলি সরেন গৃহবধূ। স্কুলের হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করেছেন ছোটো। পছন্দের বিষয় ভূগোল। ভূগোলে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৮৬। ছোটো বলছিলেন, “বাড়িতে টাকাপয়সার বড় অভাব। টিউশন নিতে পারিনি। বাড়িতে থাকলে হয়তো পড়াটা হত না। তাই হস্টেলে এসে থেকেছি।”

কেশপুরের তোড়িয়া হাইস্কুলের ছাত্রী পাপিয়া পান এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩১ নম্বর পেয়েছেন। বাড়ি হাটবাঁধিতে। টেনেটুনে সংসার চলে। বাবা বিধান পাল চাষের কাজ করেন। সামান্য জমি রয়েছে। পছন্দের বিষয় ইংরেজি। ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ারই ইচ্ছে রয়েছে। পাপিয়া বলছিলেন, “পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। স্কুল থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়তে চাই। দেখা যাক কী হয়।”

ইচ্ছা আর মনের জোর থাকলে অভাব যে স্বপ্নপূরণের পথে কাঁটা হতে পারে না, তা প্রমাণ করেছেন পাপিয়া, পিয়ালিরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE