শুধু নামেই। ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ এখনও সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরে উন্নীত হয়নি।
আছের থেকে নেই-এর পাল্লাই সেখানে ভারী। অন্তত এমনটাই অভিযোগ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁর আত্মীয় পরিজনদের। হাসপাতালে নেই নিউরো সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, পেড্রিয়াটিক সার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। ওই সব বিভাগের কোনও চিকিৎসক নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি রয়েছে অযথা রোগীকে রেফার করা চলবে না। ফলে, হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের তিন জন জেনারেল সার্জেনকেই কার্যত ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ সবই করতে হচ্ছে। এঁদের মধ্যে একজন আবার চুক্তিভিত্তিক (এক বছর) শল্য চিকিৎসক।
মাস খানেক আগে হাসপাতালে পায়ে সংক্রমণ নিয়ে আসা এক শিশুর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েন কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশও মানছেন, পেড্রিয়াটিক সার্জেন না থাকায় শিশুটির পায়ে অস্ত্রোপচার করা যায়নি। তবে সম্প্রতি এক রোগীর ছিন্ন শ্বাসনালি জুড়ে দেওয়া ও একজনের কাটা আঙুল জুড়ে দেওয়ার মতো জটিল অস্ত্রোপচার এখানে সাফল্যের সঙ্গে করা গেলেও পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সরঞ্জাম না থাকা সত্ত্বেও স্রেফ ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সফল হলে, স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য রোগীরা পরিষেবা পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় অস্ত্রোপচারের সময় কোনও অঘটন ঘটলে তখন তাঁদেরই শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রখাস করেছে চিকিৎসক মহল।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, পুরোদস্তুর সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরের পরিষেবা দিতে গেলে অবিলম্বে জেনারেল সার্জারি বিভাগে শল্য চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এখন বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে পালা করে রোগী দেখেন ও অস্ত্রোপচার করেন মাত্র তিন জন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসককে এক দিনে ছোট বড় মিলিয়ে গড়ে খান দশেক অস্ত্রোপচার করতে হয়। হাসপাতালের এক শল্য চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগীর চাপ থাকায় সম্প্রতি একদিনে আমাকে ১৮টি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।’’
মাথায় আঘাত জনিত চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের জন্য নিউরো সার্জেন নেই। ফলে খুব গুরুতর চোট পাওয়া রোগীকে রেফার করে দিতে হয়। ডায়ালিসিস পরিষেবা চালু হলেও ভাসকুলার সার্জেন না থাকায় আর্টারি ভেন ফিসচুলা (ডায়ালিসিস রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি) প্রক্রিয়াটি কলকাতার হাসপাতাল থেকে করে আনতে হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র ইএনটি, চর্ম ও প্যাথোলজি বিভাগগুলিতে সুপার স্পেশ্যালিটি পরিকাঠামো রয়েছে। অথচ চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে শল্য চিকিৎসার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হাসপাতালে নেই।
সার্ভিস ডক্টরস্ ফোরাম-এর সজল বিশ্বাস বলেন, “নামেই সুপার স্পেশ্যালিটি। জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামোই নই। এরপর রোগী রেফার না করে চিকিৎসক ও রোগী উভয়পক্ষকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও কর্মীদের আন্তরিকতার জন্যই রোগীদের কিছুটা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।” হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “ধাপে ধাপে পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।” যদিও ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।