Advertisement
০৭ মে ২০২৪
সন্ধে নামলে ভরসা টর্চ, হ্যারিকেন

প্রশ্নে নিরাপত্তা

‘ভাবনা যেখানে, শৌচালয় সেখানে’—সরকারি এই প্রচারটাই মুখে মুখে ঘুরছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ব্লক সদর শহর এলাকায়। তবে একটু অন্য ভাবে, ‘অন্ধকার যেখানে,অপরাধ সেখানে’।

আঁধারে: গাড়ির আলোয় এভাবেই পথচলা। দাসপুরে। নিজস্ব চিত্র

আঁধারে: গাড়ির আলোয় এভাবেই পথচলা। দাসপুরে। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৩:৪০
Share: Save:

‘ভাবনা যেখানে, শৌচালয় সেখানে’—সরকারি এই প্রচারটাই মুখে মুখে ঘুরছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ব্লক সদর শহর এলাকায়। তবে একটু অন্য ভাবে, ‘অন্ধকার যেখানে,অপরাধ সেখানে’।

বস্তুত, সরকারি উদ্যোগ এবং সচেতনতার অভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের ব্লক সদর শহর থেকে গ্রামীণ এলাকা সন্ধে নামলেই ডুবে যায় অন্ধকারে। কারণ, রাস্তাঘাটে বিদ্যুতের আলো নেই। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাড়ছে অপরাধ। অপরাধের বাড়-বাড়ন্তে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। কি শহর এলাকা, কি পঞ্চায়েত সর্বত্রই প্রায় এক ছবি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যথেষ্ট। টাকার অভাবও নেই। এছাড়া আইএসজিপি (পঞ্চায়েত স্বশক্তিকরণ) প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকাও বাড়ছে। সঙ্গে একাধিক অর্থ কমিশনের টাকাও পায় পঞ্চায়েতগুলি। গ্রামের হাট-বাজার থেকেও আয় রয়েছে পঞ্চায়েতের। তারপরেও এমন পরিস্থিতির জন্য পঞ্চায়েতগুলির সদিচ্ছার অভাবের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতগুলি উদ্যোগী হলে গ্রামের রাস্তাগুলিতে আলোর বন্দোবস্ত করা যায়। তা ছাড়া কেন্দ্র, রাজ্য দুই সরকারই গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের উপর জোর দিয়েছে। তারপরেও বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে পথ চলতে হচ্ছে। দাসপুর-ঘাটাল থেকে গড়বেতা-চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড় থেকে সোনাখালি সবর্ত্রই একই ছবি। রাস্তায় আলো না থাকায় সন্ধের পর পথচারিদের ভরসা বলতে টর্চ বা হ্যারিকেনের আলো।

চন্দ্রকোনা রোডের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, “এখন গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ইন্টারনেট-ফেসবুক নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। অথচ সন্ধের পর বাড়ির বাইরে বেরোলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাঁটাচলাই দায়। তা ছাড়া নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। তাই অবিলম্বে রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা জরুরি।” দাসপুরের বাসিন্দা পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী অমিয় সামন্তের কথায়, “আমার মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। টিউশনে যেতে হয় বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। ফলে সকাল সকাল দোকান বন্ধ করে মেয়েকে আনতে যেতে হয়। নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।” নাম প্রকাশে অনিচছুক চন্দ্রকোনার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর ক্ষোভ, ‘‘সন্ধে সাতটার পর টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার সময় মাঝেমধ্যেই নানা কটূক্তি ভেসে আসে। এমনকী কয়েক বার দুষ্কৃতীরা সাইকেল টেনে ধরে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। একে রাস্তায় আলো নেই। তার উপর পুলিশের দেখা মেলে না। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’’

গোয়ালতোড় পঞ্চায়েতের প্রধান মমতা বিশুই, শঙ্করকাটা পঞ্চায়েতের প্রধান শকুন্তলা সিংহ বলেন, “কয়েকটি গ্রামের রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে সব এলাকায় এখনও তা করা সম্ভব হয়নি।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহর কথায়, ‘‘এখনও বহু গ্রামেই রাস্তায় আলো নেই। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসব।” জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গ্রামের রাস্তা আলোর ব্যবস্থা করা জরুরি। অন্ধকারের সুযোগে অসামাজিক কাযর্কলাপ বাড়ছে। সর্বত্র পুলিশের টহল দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আলোর ব্যবস্থা থাকলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Electricity Hurricane Lamp Torch Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE