Advertisement
০২ মে ২০২৪
কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল

ঘর নয়, মর্গের বারান্দায় চলে দেহ ব্যবচ্ছেদ

ছাদ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। ঘরের আলোও নিভুনিভু। এমন ঘরে কি আর দেহ ব্যবচ্ছেদের কাজ চলে? ভরসা ঘরের বাইরে বারান্দাই। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের মরর্গের ছবিটা এরকমই।

বেহাল হাসপাতালের মর্গ। —নিজস্ব চিত্র।

বেহাল হাসপাতালের মর্গ। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৬:৪৫
Share: Save:

ছাদ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। ঘরের আলোও নিভুনিভু। এমন ঘরে কি আর দেহ ব্যবচ্ছেদের কাজ চলে? ভরসা ঘরের বাইরে বারান্দাই। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের মরর্গের ছবিটা এরকমই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মর্গের কোনও সংস্কার হয়নি। ফলে ছাদ দিয়ে জল পড়ে চলেছে অনবরত। আর যে ঘরে এমন ভাবে জল পড়ে সেখানে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনা থাকায় উজ্জ্বল ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। ফলে ঘরের বাইরে প্রকৃতির আলোই ভরসা। শুধু হাসপাতালের বেহাসল পরিকাঠামো নয়, ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের পুলিশ মর্গে নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমনকী পর্যাপ্ত ডোম পর্যন্ত নেই। ফলে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ পাঠাতে হয় তমলুক জেলা হাসপাতালে। আর সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলে তো কথাই নেই। দেহের ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় পশ্চিম মেদিনীপুরে।

কাঁথির পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইতিমধ্যে ১১টি মৃতদেহ কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্তের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘ এক বছর ধরেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের পুলিশ মর্গ বেহাল। অথচ টনক নড়েনি স্বাস্থ্য কর্তাদের। এমনকী চিকিৎসক কবে আসবেন সেটুকুও জানাতে পারলেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “মর্গে দীর্ঘদিন ধরে কোন এমওএমএল( মেডিক্যাল অফিসার মেডিক্যাল লিগাল) না থাকার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেউ আসেননি। ফলে হাসপাতালের পুলিশ মর্গে অন্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়েই ময়না তদন্ত করাতে হচ্ছে।”

জানা গিয়েছে, কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামও নেই। ফলে মান্ধাতার আমলের ছুরি, কাঁচি আর ছেনি হাতুড়ি দিয়েই মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ করে ময়না তদন্ত করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। বর্তমানে পুলিশ মর্গে স্থায়ী একজন ডোম রয়েছেন। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনিও ছুটিতে রয়েছেন। ফলে অবসরপ্রাপ্ত এক ডোম কাজের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘খুনের অভিযোগ থাকা মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করার ঝুঁকি নিতে চান না অনেক চিকিৎসক। আমরা রেফার করে দেওয়ার চেষ্টা করি।’’

মহকুমা হাসপাতালের পুলিশ মর্গের এমন বেহাল পরিস্থিতিতে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়তে হছে পুলিশ প্রশাসনকে। কাঁথি ও এগরা মহকুমার ১৬টি থানার অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলার মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। কাঁথির এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ও মহকুমা পুলিশ মর্গের বেহাল দশার জন্য অসুবিধার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘কাঁথি থেকে তমলুক ছুটতে হচ্ছে। সেখানে না হলে আবার পশ্চিম মেদিনীপুর। তদেহ এতটা টেনে নিয়ে যাওয়া আবার পরে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া-এতটা কাজ সারতে সময় নষ্ট হচ্ছে অনেক।’’ অন্য দিকে কাঁথির পুলিশ মর্গের বদলে তমলুক বা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে আসতে মৃতের পরিবারের লোকেদের অতিরিক্ত আর্থিক বোঝার ভার বইতে হচ্ছে। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় আরও জানান, ২০১৪ সালে ১৪টি, ২০১৫ সালে ১৬টি ও চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১১টি মৃতদেহের ৯টি মৃতদেহ পশ্চিম মেদিনীপুরে ও ২টি মৃতদেহ তমলুকে রেফার করতে হয়েছে।

মহকুমা হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের মর্গ সংস্কার ও আধুনিক পরিকাঠামোর জন্য সাড়ে আট লক্ষ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনেরও সাহায্য চাওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

morgue morgue infrastructure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE