খড়্গপুর স্টেশনের ফুটব্রিজে অকেজো ‘মেটাল ডিটেক্টর ডোর’। স্টেশনের প্রবেশপথের পাশে আরপিএফ কর্মীদের বসার জায়গা ফাঁকা। বৃহস্পতিবার। — রামপ্রসাদ সাউ।
‘এ ওয়ান’ স্টেশনের প্রবেশপথে নেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি। নিয়ম মতো ‘মেটাল ডিটেক্টর ডোর’ রয়েছে। কিন্তু অকেজো। তা সারানোর গরজও নেই কারও। মেটাল ডিটেক্টর দরজা সরিয়ে রাখা হয়েছে প্রবেশপথের একপাশে। তার পাশ দিয়ে কোনও ‘চেকিং’ ছাড়াই ঢুকছেন যাত্রীরা।
পড়াশুনোর জন্য বছর দু’য়েক খড়্গপুরে রয়েছেন আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী কিরণ মাণ্ডিয়া। কিরণের বাড়ি রাজস্থানের জয়পুরে। বাড়ি যাওয়ার জন্য খড়্গপুর থেকেই ট্রেন ধরেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘খড়্গপুর স্টেশনে গত দু’বছরে কোনও দিন নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখিনি। স্টেশনে ঢোকা-বেরনোর সময়ে যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতেও দেখা যায় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘বড় স্টেশনে ‘মেটাল ডিটেক্টর ডিভাইস’ দিয়ে সব যাত্রীর ব্যাগ পরীক্ষা হয়। কিন্তু এত বড় জংশন স্টেশনের এই চেহারা দেখে আমরা শঙ্কিত।”
খড়্গপুর স্টেশনের মূল প্রবেশপথের পাশে গাছের তলায় আরপিএফ-এর বসার জায়গা। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে কাউকে চোখে পড়ল না। টিকিট কাউন্টার থেকে সাবওয়ে দিয়ে অবাধে স্টেশনে যাতায়াত করছে যাত্রীরা। স্টেশনের ওভারব্রিজেও নিরাপত্তার বালাই নেই। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পুতুল দাসমল্লিকের স্বামী কর্মসূত্রে ওড়িশায় থাকেন। পুতুলদেবী প্রায়ই খড়্গপুর থেকে ট্রেন ধরে ওড়িশায় যান। তাঁর কথায়, “স্টেশন চত্ত্বরে রেল সুরক্ষা বাহিনীকে মাঝেমধ্যে ঘুরতে দেখি। তবে সে ভাবে তল্লাশি চালাতে দেখা যায় না। স্টেশনে ঢোকা-বেরনোর সময়ে কোনও যাত্রীর ব্যাগ পরীক্ষা করা হয় না।’’
১৮৮৯ সালে তৈরি হয় খড়্গপুর স্টেশন। রেল সূত্রে খবর, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশন খড়্গপুর দিয়ে দিনে গড়ে ২১ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। দিনপ্রতি গড়ে এই স্টেশনে টিকিট বিক্রি হয় ১৬ লক্ষ টাকার। গুরুত্ব অনুযায়ী খড়্গপুর স্টেশনকে ‘এ ওয়ান স্টেশন’ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এমন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে নিরাপত্তার ফাঁকফোকর বিস্তর।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাওড়া-খড়্গপুর শাখার গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। আরপিএফও নিয়মিত টহল দেয়। যদিও স্টেশন চত্বরে ঘুরে দেখলেই আসল ছবিটা ধরা পড়ে। স্টেশনের প্রবেশপথে নেই কোনও ‘মেটাল ডিটেক্টর ডোর’, ‘ব্যাগেজ স্ক্যানার’। স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রয়েছে একমাত্র আরপিএফ বুথ। রেলযাত্রীদের দাবি, খড়্গপুর স্টেশনের প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আরপিএফের টহল বাড়ানোর দাবিও জানাচ্ছেন অনেকে। কলকাতার সোনারপুরের বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুপ্রিয় দাসের অভিযোগ, “রেল কর্তৃপক্ষের উচিত, অবিলম্বে স্টেশন চত্বরে নিরাপত্তার আধুনিক সরঞ্জাম বসানো।” এ বিষয়ে রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল সিকিউটিরি কমিশনার মহেশ্বর সিংহ বলেন, “আরপিএফ স্টেশনে টহল দেয়। ‘মেটাল ডিকেক্টর’-এর মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। কিন্তু এ গুলি চালু হলেও যাত্রীরা সচেতন না হওয়ায় সুফল পাওয়া যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy