খাতায়-কলমে একশোয় একশো। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা ঠিক উল্টো কথা বলছে।
নার্স-আরএমও ছাড়াই দিব্যি চলছে নার্সিংহোম-এমন অভিযোগ বহুদিনের। এ বার জেলার বেসরকারি নার্সিংহোমের এই অলিখিত নিয়ম ভাঙতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
আচমকা পরিদর্শনের সময় নার্স এবং আরএমওদের দেখা না মিললে তাঁদেরও শো-কজ করতে চলছে জেলা স্বাস্থ্য ভবন। শুধু তাই নয়, শো-কজের উত্তর সন্তোষজনক না হলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এতদিন নার্সিংহোমগুলিতে পরিদর্শনে গিয়ে বেনিয়ম দেখলেই সংশ্লিষ্ট মালিকদের শো-কজ করা হচ্ছিল। রোগী ভর্তিও বন্ধ করার নির্দেশ দিতাম। এ বার নার্স-আরএমওদের দেখা না মিললে তাঁদের শো-কজ করা হবে।’’
চিকিৎসা সংক্রান্ত আইন বলছে, নার্সিংহোমে প্রতি পাঁচটি শয্যা পিছু একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স (পশ্চিমবঙ্গ নার্সিং কাউন্সিলে নথিভুক্ত হতে হবে) এবং ২০টি শয্যা পিছু একজন আরএমও (রেজিস্টার মেডিক্যাল অফিসার)-সহ প্রয়োজনীয় কর্মী থাকতেই হবে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, খাতায়-কলমে নার্স, আরএমও থাকলেও বাস্তবে তাঁদের কোনও অস্তিত্ব নেই। নিয়মানুযায়ী, নার্সিংহোম নবীকরণ বা নতুন লাইসেন্সের সময় নার্স বা চিকিৎসকেরা ওই নার্সিংহোমে কাজের সম্মতি দেন সংশ্লিষ্ট মালিকদের। তাঁদের সম্মতির সেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিলে তবে মেলেই নার্সিংহোম চালুর অনুমোদন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সম্মতি খাতায়-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। আদতে নার্স বা আরএমও ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করেন না বলেই অভিযোগ।
নার্সিংহোম মালিকদের একাংশ স্বীকারও করেছেন, “খাতায়-কলমেই চুক্তি হয়। বহু নার্স ও চিকিৎসক নার্সিংহোমই দেখেন নি। সম্মতি নিয়েই তো দিব্যি মিলছিল অনুমোদন।” ঘাটালের নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত একাধিক নার্সের কথায়, ‘‘নার্সিংহোমে থাকতে হবে আমরা জানি। কিন্ত এই কাজের পাশাপাশি অন্য কাজও তো থাকে। কত টাকাই বা পাই। তাই থাকিনি।’’ একই বক্তব্য নার্সিংহোমে যুক্ত আরএমও-দেরও। এমনকী অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও। তিনি বলেন, “আরএমও এবং প্রশিক্ষিত নার্সেরা লিখিত সম্মতি দিচ্ছেন, অথচ থাকবেন না এটা হতে পারে না। তাঁরাও দায় এড়াতে
পারেন না।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি নার্সিংহোমের মালিকদের কড়া বার্তা দিয়েছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ওই বার্তার পরই তৎপর হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই নার্সিংহোম পরিদর্শনের জন্য একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে। এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এমন সিদ্ধান্তে হাল কতটা ফেরে নার্সিংহোমগুলোতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy