সারা শরীরে ব্যর্থ প্রেমের আঘাত নিয়ে জঙ্গলের মাঝে স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে রয়েছে বছর চল্লিশের প্রৌঢ়!
চার সদস্যের প্রাণী চিকিৎসকদের দলটি দ্রুত ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে চিকিৎসা শুরু করেছেন। উদ্বিগ্ন মুখে রূপনারায়ণ বন বিভাগের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্ত, খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ এবং অরণ্যপালন (দক্ষিণ বিভাগ)-এর ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহাও চলে এসেছেন সেখানে। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নজরদারি চালাচ্ছেন হুলা পার্টির সদস্যরা। বলা তো যায় না, ‘বিজয়ী প্রেমিক’ যদি ফের এসে হামলা চালায়!
ত্রিকোণ প্রেমে কিছুই তো অসম্ভব নয়। বুধবার গোয়ালতোড় রেঞ্জের রামগড় বিটের বাঁকিশোলের জঙ্গলে এমন আবহে চিকিৎসা করা হল বছর চল্লিশের একটি রেসিডেন্সিয়াল দাঁতাল হাতির। তার আগে অবশ্য এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার প্রযুক্তি সহায়ক সুব্রত পাল চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে মৃদু মাত্রায় ঘুম পাড়ানি গুলি ছোড়েন গোয়ালতোড়ের রেঞ্জ অফিসার বিশ্বনাথ ভঞ্জ। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই জঙ্গলের মাঝে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায় হাতিটি। এরপরই প্রাণী চিকিৎসকরা হাতিটির চিকিৎসায় লেগে পড়েন।
রূপনারায়ণ বন বিভাগের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, “এই গরমে দশ ফুট উচ্চতার প্রকাণ্ড ওই হাতিটিকে পুরোপুরি অজ্ঞান করাটা ঝুঁকির কাজ হতো। তাই মৃদু মাত্রায় সংজ্ঞাহীন করার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে হাতিটি আছন্ন অবস্থায় প্রায় দেড়ঘন্টা স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যেই হাতিটির চিকিৎসা করেন প্রাণী চিকিৎসকরা।”
ঝাড়গ্রামের সরকারি প্রাণী চিকিৎসক সজলকুমার দত্ত বলেন, “হাতিটির পিছনের দু’টি পায়ে মূলত বেশি ক্ষত ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতস্থানগুলি পরিষ্কার করে নানা ধরনের ওষুধ লাগানো হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক-সহ নানা ধরনের ইনজেকশনও দেওয়া হয়েছে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে ওই এলাকায় হাজির হয় দলমার পালের গোটা কুড়িটি হাতি। দলমার দলে বেশ কয়েকটি হস্তিনীও ছিল। রেসিডেন্সিয়াল হাতিরা দলমার দল ভাঙিয়ে সঙ্গিনী জোগাড় করার চেষ্টায় থাকে। বনকর্মীদের অনুমান, প্রৌঢ় রেসিডেন্সিয়াস হাতিটিও সেই চেষ্টা করেছিল। সম্ভবত, দলমার পালের কোনও পুরুষ হাতির আক্রমণে রেসিডেন্ট হাতিটি জখম হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, বয়সজনিত কারণে হাতিটি চোখে ভাল দেখতে পায় না। বনকর্মীদের ধারণা, সেই কারণেই হাতিটি প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেনি। আপাতত গোয়ালতোড় রেঞ্জের জঙ্গলে রয়েছে হাতিটি। খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, দলমার পালের হাতিগুলি অবশ্য গতিপথ পরিবর্তন করে ঝাড়খণ্ডে ফেরার পরিবর্তে মেদিনীপুরের চাঁদড়া হয়ে কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জটিয়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে।