Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Oppression of Promoters

প্রোমোটিং-চক্রে মদত কাদের, প্রশ্ন

শহরবাসীর একাংশ এর নেপথ্যে রাজনৈতিক মদতকেই দায়ী করছেন। পুরসভা- পুলিশ এবং প্রশাসনের একাংশের মদতকেই দায়ী করছেন।

গোলকুঁয়াচকে ভেঙে দেওয়া দোকানঘর মেরামতের কাজ চলছে।

গোলকুঁয়াচকে ভেঙে দেওয়া দোকানঘর মেরামতের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৫
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে একদল দুষ্কৃতীর দুই বুলডোজ়ারে কয়েকটি দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। সব সম্বল হারিয়ে হাহাকার করছেন ওই দোকানিরা। শহর মেদিনীপুরের গোলকুঁয়াচকের এই ঘটনা প্রোমোটার- রাজ এবং শহরে বেআইনি নির্মাণ ব্যবসার বাড়বাড়ন্তকে ফের সামনে এনে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন লাগাম পরানো যাচ্ছে না প্রোমোটিং- চক্রে। এর পিছনে কাদের প্রশ্রয় বা মদত রয়েছে।

শহরবাসীর একাংশ এর নেপথ্যে রাজনৈতিক মদতকেই দায়ী করছেন। পুরসভা- পুলিশ এবং প্রশাসনের একাংশের মদতকেই দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, ওই অংশের মদত না- পেলে প্রোমোটিং- চক্রের এই বাড়বাড়ন্ত হয় না। পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশি করে। শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো বহুতল গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে। একাংশ গজাচ্ছে নিয়ম না মেনেই। এ সব বন্ধ করতে পুরসভা কেন তৎপর নয়, কোন স্বার্থে আঘাত লাগার আশঙ্কায়, এই প্রশ্নও উঠছে। অনুযোগ, নগরোন্নয়নের নীতি সুষ্ঠু প্রয়োগে পুর- কর্তৃপক্ষের ঢিলেমি রয়ে গিয়েছে। সেই সুযোগে এক শ্রেণির প্রোমোটার মুনাফা করছেন। রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, ‘‘শহরে অনিয়মই যেন দস্তুর। কখনও নিচু জমি ভরাট করে বেআইনি বহুতল উঠছে, কখনও পুরনো বাড়ি বা জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। সবেতেই প্রোমোটার দাপটের ছায়া। অনেক ক্ষেত্রেই পুরসভা বেআইনি নির্মাণ ভাঙার সাহস দেখায় না। ফলে, প্রোমোটিং- রাজ চলে নিজের নিয়মেই।’’ তৃণমূল পুরপ্রধান সৌমেন খানের অবশ্য দাবি, ‘‘প্রোমোটিং চক্র বন্ধ করতে পুরসভা তৎপর। অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়।’’

একাংশ শহরবাসীর মতে, প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই রাজনৈতিক যোগ রয়েছে। কেউ এই ‘দাদা’র স্নেহধন্য, কেউ ওই ‘দাদা’র স্নেহধন্য। একাংশ প্রোমোটারের বেআইনি কাজ দেখেও তাই না- দেখার ভান করতে হয় ‘দাদা’দের! অথচ, মুখ্যমন্ত্রী বারবার কড়া বার্তা দেন। ভিন্ জেলার একাধিক ঘটনায় অসাধু প্রোমোটার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ- প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা-ও ওই ‘দাদা’দের হুঁশ ফেরেনি। গত কয়েক বছরে বেআইনি প্রোমোটিং বেড়েছে বলে অভিযোগ। বেড়েছে একাংশ প্রোমোটারের দৌরাত্ম্য। শহরের গোলকুঁয়াচকের ঘটনাটিই তার প্রমাণ। যে ঘটনায় জমি দখল চক্রের দিকেও আঙুল উঠছে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনায় সর্বণ আগরওয়াল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বণ প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। বাকি জড়িতদের খোঁজ চলছে।

সোমবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন বিধায়ক জুন মালিয়া। গোলকুঁয়াচকের ওই ঘটনাস্থলে যান তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। কখন, কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের কাছ থেকে তা শুনেছেন। রাতের শহরে পুলিশি নজরদারি থাকার কথা। সেই নজরদারির মধ্যেই, কী ভাবে বুলডোজ়ার চালিয়ে দোকানগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে গেল দুষ্কৃতীরা, সেই প্রশ্ন এদিনও ফের ওঠে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা বরুণ সেন, নাজির আলি, পারভেজ কিবরিয়া প্রমুখের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। এদিন পর্যন্ত তাঁদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তারা যে এমন ঘটনা সমর্থন করে না, তা স্পষ্ট করেছে প্রোমোটারদের সংগঠন। প্রোমোটারস্ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘যে বা যারা ওই কাজটা করেছে রাতের অন্ধকারে, তারা নির্লজ্জ কাপুরুষের মতো কাজ করেছে। এটা কোনও সুস্থ মানুষ করতে পারে বলে আমাদের মনে হয় না। আমরা ধিক্কার জানাই।’’ প্রোমোটিং চক্রের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘এ রকম ঘটনার উদাহরণ কিন্তু আর মেদিনীপুরে নেই। আমার জন্ম মেদিনীপুরেই। আমরা চাই, এটা প্রথম, আর এটাই যেন শেষ হয়। কোনও দিন যেন এ রকম ঘটনা আর না ঘটে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয়, ওরা ব্যবসাদার নয়। নিজে লুটে খাব, অন্যরা বঞ্চিত হবে, ব্যবসাদারের চরিত্র এটা হতে পারে না। এটা প্রকৃত ব্যবসাদার চাইতেই পারে না।’’ ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের অভিযোগ, তাণ্ডব চালিয়েছে ৪০- ৫০ জনের দুষ্কৃতী দল। সেখানে সোমবার পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেফতার এক। জড়িতদের ধরপাকড়ে পুলিশের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। একাংশ শহরবাসী মনে করাচ্ছেন, সরকারি সদিচ্ছা তো আর আকাশ থেকে পড়ে না! তাঁদের মতে, কড়া পদক্ষেপ করা গেলে তবেই এমন ঘটনা আটকানো যাবে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘কী হয়েছে, না হয়েছে, সেটা পুলিশ গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করছে। কড়া পদক্ষেপই করা হবে।’’

কাদের প্রশ্রয়ে প্রোমোটিং চক্রের বাড়বাড়ন্ত? পিছনে হাত কোন ‘দাদা’দের? প্রশ্ন রয়েছে। উত্তর নেই। অতএব, সাধু সাবধান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE